আনুষ্ঠানিক ইবাদাতের মধ্যে সালাত (নামায) সর্বশ্রেষ্ঠ। কিয়ামতের দিন প্রথমেই বান্দাহকে সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। পবিত্র কুরআন পাকে বারবার সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতএব তোমরা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করো যখন সন্ধ্যা হয় এবং যখন সকাল হয়। আসমান ও জমিনের প্রশংসা শুধু তারই। এবং তাঁর তাসবিহ পাঠ করো তৃতীয় প্রহরে এবং যখন যোহরের সময় আসে।’ (সূরা রুম, আয়াত : ১৭-১৮)
‘তাসবিহ’ বলতে এখানে সালাতের কথা বলা হয়েছে। হুজুর পাক সা. নামাযকে ইসলামের ‘খুঁটি’ (পিলার) বলে অভিহিত করেছেন। তিরমিযি শরিফের হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত আবদুল্লাহ্ বিন শফিকুল উকাইলি বর্ণনা করেছেন, ‘রাসূল সা.-এর সাহাবীগণ নামায ব্যতীত অন্য কোনও আমল ত্যাগ করাকে কুফরি মনে করতেন না।’
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে জামায়াতে শরিক হয় না, তার কান গলিত সিসা দিয়ে ভরে দেওয়াই উত্তম।’ রাসূল সা. বলেছেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার যে কাজ সম্পর্কে সর্বপ্রথম হিসাব-নিকাশ নেওয়া হবে তা হচ্ছে ‘নামায’। হিসাব দিতে সমর্থ হলে সে সফল নতুবা ব্যর্থতা অবধারিত। ইবনে সিরিন রহ. বলেন, “যদি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করা এবং দুই রাকায়াত নামায পড়ার মধ্যে কোনও একটার অধিকার দেওয়া হয়, তবে আমি দুই রাকায়াত নামায পড়াকেই গ্রহণ করব। কেননা, জান্নাতে প্রবেশ করা আমার নিজের খুশির জন্য, আর দুই রাকায়াত নামায হল আমার পালনকর্তা আল্লাহর জন্য।’ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছে, ‘তোমরা কি ধারণা করো, যদি তোমাদের কারও বাড়ির সামনে, একটি নদী থাকে এবং সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে তার দেহে কি কোনও ময়লা থাকবে?’ সাহাবাগণ বললেন, ‘তার দেহে কোনও ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘এ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উপমা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সাহায্যে আল্লাহতায়ালা গুনাহগুলো মাফ করে দেন।’ (বুখারী) হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘নামাযকে নষ্ট করার অর্থ পুরোপুরি বাদ দেওয়া বা বর্জন করা নয়, এর অর্থ হল নির্দিষ্ট সময়ের পরে পড়া। নামায ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কায়েম না করা বা কাযা করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে জামায়াতে শরিক না হওয়া।’
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব বলেন, ‘এর অর্থ পরবর্তী নামাযের সময় না আসা পর্যন্ত নামায বিলম্বিত করা। এটি করতে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এ অভ্যাসের ওপর তাওবা না করেই মারা যায় আল্লাহ্ তাকে ‘গায়’ নামক স্থানে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।’ এটি দোযখের একটা কঠিন ও ভয়ংকর জায়গা। আর-একটি আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, ‘সেই সব নামাযীর জন্য ‘ওয়াইল’ (ধ্বংস) যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে শিথিল।’ অর্থাৎ আলসেমি ও গড়িমসি করে এবং ইচ্ছাকৃত জামায়াত ত্যাগ করে। হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. বলেন, আমি রাসূল সা.-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘এই শিথিলতা কী?’ তিনি বললেন, ‘নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরিতে নামায পড়া। নবী করিম সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি শরিয়াসম্মত ওজর ব্যতীত দুই ওয়াক্ত নামায একসঙ্গে পড়ল, সে কবিরা গোনাহের দরজাগুলোর মধ্য থেকে একটাতে প্রবেশ করল।’ (তিরমিযি)
রাসূল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে নামায ত্যাগ করল সে অবিশ্বাসমূলক কাজ করল।” আর-একটি হাদীসে এসেছে – ‘অবিশ্বাসী ও মুসলমানের পার্থক্য হল নামায।’ জাহান্নামবাসী সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, ‘জান্নাতবাসী তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, কোন্ কারণে তোমরা দোজখে গেলে? তারা জবাব দেবে, আমরা নামায আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ রাসূল সা. বলেছেন, ‘অমুসলিমদের ও আমাদের মাঝে যে অঙ্গীকার তা হচ্ছে নামায-সংক্রান্ত। ‘ নামাযকে যে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করল- সে অবিশ্বাসী।’ তিনি আরও বলেছেন, “বান্দার ও তার অবিশ্বাসী হওয়ার মাঝে কেবল নামায ত্যাগ করার ব্যবধানই কাজ করে।’ বুখারী হাদীসে আছে, রাসূল সা. বলেছেন, “যার আসরের নামায ছেড়ে যায়, তার সব সৎ কাজ বৃথা হয়ে যায়।’ অপর হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে, আল্লাহ্ তার দায়িত্ব থেকে মুক্ত।’
রাসূল সা. বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার ফরমান- আমি আমার বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং নিজেই ওয়াদা করেছি, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইহতিমাম (ব্যবস্থা) করবে আমি নিজ জিম্মাদারিতে তাকে জান্নাতে দাখিল করব। আর যে ব্যক্তি ওই নামাযের ইহতিমাম করবে না, আমার ওপর আর কোনও জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ, নাসায়ী)
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. তাঁর সব প্রাদেশিক গভর্নরকে লিখেছিলেন, “তোমাদের সব কাজের মধ্যে আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নামায। যে ব্যক্তি নিজের নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে এবং তার ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখবে, সে তার গোটা দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হবে, সে নামায ছাড়া অন্যান্য দ্বীনি কাজের রক্ষণাবেক্ষণে আরও বেশি ব্যর্থ হবে।’ (মিশকাত)
হযরত মু’আয রা. বলেন, আমাকে হুজুর সা. ওসিয়ত করেছেন, ‘হে মু’আয! ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায ত্যাগ কোরো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায ত্যাগ করে তার প্রতি আল্লাহতায়ালার কোনও জিম্মিদারি থাকে না।’ হযরত জাবির রা. বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, “তিনটি গুণ এমন আছে যা কোনও ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া গেলে আল্লাহতায়ালা তাকে নিজ আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন, যে দিন তার ছায়া ছাড়া আর কোনও ছায়া থাকবে না। তাদের একজন হল, অন্ধকার রাতে মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি অর্থাৎ জামায়াতের সঙ্গে নামায পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়া।’
অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেন, ‘সাত শ্রেণির লোক আল্লাহর আরশের ছায়া পাবেন যে দিন অন্য কোনও ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে একজন হবেন ওই ব্যক্তি যার অন্তর সব সময় মসজিদে লটকানো থাকে অর্থাৎ জামায়াতের সঙ্গে নামায পড়ার জন্য সে অপেক্ষা করে।”
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ