সম্পদ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন: ‘মানুষের সামনে এমন এক যুগ আসবে যে যুগে টাকা-পয়সাই হবে মূল। টাকা-পয়সা ছাড়া কোনও উপকারই হবে না।’ (মিশকাত)
আল্লাহতায়ালা আমাদের সীমাহীন নিয়ামত দান করেছেন। এসবের মধ্যে সম্পদ খুব বড় এবং অতীব প্রয়োজনীয় এক নিয়ামত।
উম্মতের সবচেয়ে বড় সমস্যাও এই সম্পদ। রাসুলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন : ‘প্রতিটি উম্মতের একটা ফিতনা ছিল। আমার উম্মতের ফিতনা হল সম্পদ।’ (মিশকাত)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে : ‘তোমরা দরিদ্র ও গরিব হয়ে যাবে, এ ব্যাপারে আমি কোনও আশংকা করছি না। বরং তোমাদের ব্যাপারে আমার ভয় হচ্ছে যে, তোমাদের দুনিয়াতে টাকা-পয়সা বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে, যেমন পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর তোমরা দুনিয়ার প্রতি আগ্রহী হবে, যেমনটি তারা হয়েছিল এবং দুনিয়া তোমাদের ধ্বংস করে দেবে, যেমনটি তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিল।’ (মিশকাত)
সম্পদ সবচেয়ে বড় নিয়ামত, আবার সবচেয়ে বড় ফিতনা বা সমস্যা। প্রশ্ন হল, আমাদের করণীয় কী? রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন : ‘দুনিয়া খুব মধুর ও চাকচিক্যময়। আল্লাহতায়ালা তোমাদের দুনিয়া আবাদ করার জন্য খলিফা নিযুক্ত করেছেন। তিনি দেখতে চান, তোমরা কেমন আমল কর। এজন্য সম্পদ ও যৌন-লালসার ব্যাপারে সতর্ক থাকো।’ (মিশকাত)
সম্পদের মোহে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। সম্পদ আমাদের দরকার আছে, আবার সম্পদ ফিতনারও কারণ। সম্পদের ব্যাপারে কয়েকটি মূলনীতি অনুসরণ করলে ফিতনা থেকে বাঁচা সম্ভব। সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে দুইটি মূলনীতি রয়েছে।
হারাম পদ্ধতি অবলম্বন করে সম্পদ উপার্জন করা যাবে না। হালাল পন্থা অবলম্বন করলে কখনও ফিতনায় পড়তে হবে না। বরং হালাল উপার্জন দ্বারা নেকি অর্জন হবে, নামায-রোযা করলে যেমন নেকি হয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: ‘হালাল পদ্ধতিতে সম্পদ উপার্জন কর, এটা অন্যান্য ফরযের উপরে ফরয।’ (মিশকাত)
সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মূলনীতি হল- নিয়ত শুদ্ধ রাখতে হবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি হালাল পদ্ধতিতে সম্পদ উপার্জন করবে, যাতে মানুষের কাছে হাত বাড়াতে না হয় এবং সেই টাকা-পয়সা দিয়ে সন্তান-সন্ততি লালন পালন পাড়া-প্রতিবেশী গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহমর্মিতা করা, প্রদর্শন করা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার চেহারা ১৪ তারিখের চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে।’ (মিশকাত)
হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন যদি এই নিয়তে করে যে, আমার টাকা বেশি হবে। আমি বড় ধনী হবো, সমাজে আমার মানসম্মান বৃদ্ধি পাবে মানুষ আমাকে ধনী বলবে, তাহলে হালাল পন্থা হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহতায়ালা তার ওপর। অসন্তুষ্ট হবেন। ওই হাদীসের শেষাংশে বর্ণিত। হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি টাকা-পয়সা হালাল পন্থায়। উপার্জন করে প্রাচুর্য ও প্রতিযোগিতার নিয়তে, অহংকার ও লোক দেখানোর জন্য, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ। করবে যে আল্লাহতায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন।’
সম্পদ খরচ করার ক্ষেত্রেও দুইটি মূলনীতি রয়েছে। ১. বৈধ স্থানে খরচ করতে হবে। অবৈধ স্থানে খরচ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবৈধ স্থানে খরচকারীকে পবিত্র কুরআনের ভাষায় : ‘মুবাজজিরা’ তথা অপব্যয়কারী বলে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘আত্মীয়স্বজনকে | তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)
খরচের ব্যাপারে দ্বিতীয় মূলনীতি হল, বৈধ স্থানে বৈধ পন্থায় খরচ করতে হবে। ছেলেমেয়েদের জন্য খরচ করা বৈধ। কিন্তু অবৈধভাবে খরচ করা যাবে না। অতিরঞ্জিত খরচ করা যাবে না, আবার একেবারে কমও করা যাবে না। বৈধ স্থানে অতিরঞ্জিত খরচ করাকে পবিত্র কুরআনের ভাষায় ‘ইসরাফ’ এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম খরচ করাকে ‘তাকতির’ বলে। দুই পন্থা থেকেই বিরত থাকতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করতে হবে। ভালো খাওয়া-পরার সামর্থ্য থাকলে ভালো খাবেন, ভালো পরবেন। টাকা-পয়সা কম থাকলে অতিরঞ্জিত করবেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: “তোমরা খাও, পান করো। অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না।'(সূরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ