অপবাদ গীবতের চেয়ে অনেক বড় পাপ কাজ। গীবত হচ্ছে কোনও ব্যক্তির কোনও ত্রুটির কথা অবগত হয়ে সংশোধনের উদ্দেশ্যে সেই বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ না করে অন্য লোকের নিকট তা বলাবলি করা। এই কাজটিকে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিন্দা করে মুমিনদেরকে তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কোনও ব্যক্তির কোনও ভাই মারা গেলে সেই ব্যক্তি যদি তার মৃত ভাইয়ের গোশত দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে চিবিয়ে খেতে থাকে, তা যেমন অতীব ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজ, কোনও ব্যক্তির গীবত করাকেও তেমনি ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজ বলে উল্লেখ করেছেন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। গীবতের পাপের ভয়াবহতা বুঝাতে গিয়ে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, গীবত জ্বেনার চেয়েও জঘন্য। এই জঘন্য পাপ থেকে আত্মরক্ষা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ত্রুটি কেবল তাকেই দেখিয়ে দিয়ে তাকে সচেতন করে তোলার প্রয়াস চালাতে মুমিনদেরকে উৎসাহিত করেছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । অর্থাৎ ব্যক্তিকে তার ত্রুটি সম্পর্কে অবহিত করে সংশোধনের
প্রয়াস চালানো পুণ্যের কাজ। পক্ষান্তরে এই ত্রুটির কথা অন্যদের নিকট বলে বেড়ানো পাপের কাজ।
অপবাদ হচ্ছে কোনও সৎ ও চরিত্রবান ব্যক্তি সম্পর্কে এমন সব কথা রটানো যা উক্ত ব্যক্তি দ্বারা কখনও সংঘটিত হয়নি। যেহেতু এটি সম্পূর্ণরূপে একটি মিথ্যাচার, সেহেতু এর পাপ গীবতের পাপের চেয়ে অনেক বেশি।
হিংসাপরায়ণ ব্যক্তিরাই সাধারণত এই ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়। ইসলাম-বিদ্বেষী শক্তি কখনও কখনও ইসলামী সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে এই জঘন্য কাজটিকে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তারা অপবাদের দ্বারা ইসলামী সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের চরিত্র হনন করে তাদেরকে জনসমক্ষে হেয় করতে চায়। এইভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপচেষ্টার ভেতর দিয়ে তাদের কুৎসিত চেহারা ফুটে ওঠে। প্রকাশ ঘটে এক জঘন্য মানসিকতার। প্রমাণ মেলে তাদের সংকীর্ণ মনের এবং অসুস্থ মানসিকতার।
উল্লেখ্য, সংকীর্ণ মন ও অসুস্থ মানসিকতা দিয়ে আর যাই হোক, সত্যিকার অর্থে দেশের কল্যাণ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব নয়।
অপবাদ-অপপ্রচার দ্বারা সাময়িকভাবে কিছু হীনস্বার্থ হাসিল হতে পারে, কিন্তু শেষাবধি তা বুমেরাং হয়ে থাকে, ইতিহাস তো সেই কথাই বলে। এক পর্যায়ে জনগণ অপবাদ রটনাকারীদের আসল চেহারা চিনে ফেলে। তখন জনগণের আদালতে তারা লাঞ্ছিত হয়, অপমানিত হয়। তারা নিন্দুক, হিংসুক ও মিথ্যুক হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করে। শেষাবধি তাদের ঠাঁই হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।
পক্ষান্তরে যাদের বিরুদ্ধে অপবাদের ঢোল বাজানো হয়, জনগণ তাদের সততা ও সত্যনিষ্ঠতা উপলব্ধি করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে।
এই নিরিখে বলা যায়, যারা অপবাদ ছড়িয়ে পুলকিত হয়, তাদের আসলে পুলকিত হওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ মন্দ পরিণতিই তাদের জন্য অপেক্ষমান। পক্ষান্তরে অপবাদের হাওয়াইবাজি যাদেরকে মানসিক যন্ত্রণা দেয়, তাদেরও বিচলিত হয়ে পড়া সমীচীন নয়। কারণ মুমিনদেরকে তো প্রতিটি দৈহিক কষ্ট ও প্রতিটি মানসিক কষ্টের প্রতিদান হিসেবে বড় রকমের পুরস্কার প্রদানের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ