ইসলাম ও মুক্তমনা সম্পর্কিত বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অভিচিন্তন অনুভবের দৃশ্যময়তা ইসলামের দৃষ্টিতে মনোবিজ্ঞান-পাঠ – ড. মালিক বদরী
২। আরজ আলী সমীপে – আরিফ আজাদ
৩। ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার মনস্তাত্ত্বিক লড়াই – মুহাম্মদ ইসহাক খান
৪। ইসলামঃ তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে – শরীফ আবু হায়াত অপু
৫। কুরআনের আলোকে নাস্তিকের মনস্তত্ত – এস এম জাকির হুসাইন
৬। কোরানিক সেলফ কন্ট্রোল এবং মৃত্যুহীন জীবন – এস. এম. জাকির হুসাইন
৭। গোপন মৃত্যু ও নবজীবন – এস এম জাকির হুসাইন
৮। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড – শামসুল আরেফিন
৯। তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে – শরীফ আবু হায়াত অপু
১০। নাস্তিকতাবাদের পতন – হারুন ইয়াহিয়া
১১। নাস্তিকের মনস্তত্ব – এস এম জাকির হুসাইন
১২। নাস্তিক্যবাদ উৎস ও সমাধান – আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক
১৩। পড়ো – ওমর আল জাবির ও শরীফ আবু হায়াত অপু
১৪। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ অথবা এটা – আরিফ আজাদ
১৫। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ – আরিফ আজাদ
১৬। বাক্সের বাইরে – শরীফ আবু হায়াত অপু
১৭। বাংলার তসলিমা নাসরীন – ড. জাকির নায়েক
১৮। বিশ্বাস ও আত্নোন্নয়ন – কাজী মোঃ মোরতুজা আলী
১৯। বিশ্বাসের যৌক্তিকতা – রাফান আহমেদ
২০। বেলা ফুরাবার আগে – আরিফ আজাদ
২১। মুক্ত বাতাসের খোঁজে – লস্ট মডেস্টি
২২। সত্যকথনঃ ইসলাম বিদ্বেষীদের বিভ্রান্তির জবাব ১–৩০০ পর্ব
২৩। সংবিৎ – জাকারিয়া মাসুদ
২৪। সবুজ পাতার বন – আব্দুল আযীয আত-তারীফী
২৫। সমকালীন অপ্রিয় প্রসঙ্গ – মোঃএনামুল হক
২৬। সুখময় জীবনের সন্ধানে – ড. শাইখ মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আরিফী
২৭। সুখী হওয়ার ১০ টি উপায় – মুহাম্মদ নাসীল শাহরুখ
২৮। সুখের সন্ধান – আব্দুল হামীদ ফাইযী
২৯। সৃষ্টিকর্তা সত্যিই আছেন ! – এস. এম. জাকির হুসাইন
৩০। হারিয়ে যাওয়া মুক্তো – শিহাব আহমেদ তুহিন
ইসলাম ও মুক্তমনা পরিচিতি
জাতিসঙ্ঘ রচিত মানবাধিকার সনদে আরও একটি স্বাধীনতার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা হল, মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। অর্থাৎ সকল মানুষ স্বাধীন। সুতরাং প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে, সে যা ইচ্ছা তাই বলবে, ইচ্ছামত যে কোন মত প্রকাশ করবে বা যে কোন মতাদর্শ প্রচার করবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হবে না।
অথচ ইসলামে শর্ত হীনভাবে মুক্তচিন্তা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। ইসলামি শরিয়তে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামি শরিয়তে সকলকে এ অধিকার দেয় নি যে, সে যা মনে চায় তাই বলবে। কেননা, ইসলাম এসেছে মানুষকে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহবান জানাতে। আর সকল মানুষের বিচার-বুদ্ধি সমান নয়। সুতরাং মানুষকে যদি এ সুযোগ দেয়া হয় যে, সে যা মনে চায় তাই বলবে বা যে কোন সংশয়-সন্দেহ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিবে তাহলে দেখা যাবে, যার ঈমান দুর্বল বা যে ব্যক্তি শয়তানি সংশয়ের জবাব দেয়ার মত যোগ্যতা রাখে না তার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে বা সমাজে বিপর্যয়-বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে উমর রা. এর যুগে সংঘটিত একটি ঘটনা:
গুনাইম গোত্রের সুবাইগ ইবনে ইসল নামক এক ব্যক্তি মদিনায় আগমন করল। তার কাছে ছিল কিছু বই-পুস্তক। সে লোকটি কুরআনে আয়াতে মুতাশাবিহ (অস্পষ্ট ও ব্যাখ্যা সাপেক্ষ) আয়াতগুলোর ব্যাপারে লোকজনকে জিজ্ঞেস করা শুরু করল। বিষয়টি উমর রা. এর নিকট অভিযোগ উঠলে তিনি সে ব্যক্তিকে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠালেন। আর ইতোমধ্যে তার উদ্দেশ্যে তিনি খেজুরের ডালের কয়েকটি লাঠি প্রস্তুত করলেন।লোকটি উমর রা. এর নিকটে এসে বসলে-তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন: কে তুমি?
বলল: আমি আব্দুল্লাহ সুবাইগ উমর রা.: আমি আব্দুল্লাহ উমর। এরপর তিনি তাকে খেজুরের লাঠি দিয়ে তাকে প্রহার শুরু করলেন। লোকটি আহত হয়ে তার চেহারা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। তখন এক পর্যায়ে সে বলল, হে আমিরুল মুমিন, যথেষ্ট হয়েছে, এবার থামুন। আল্লাহর কসম, আমার মাথায় যা ছিল তা দূর হয়ে গেছে।” অর্থাৎ হে আমীরুল মুমিনীন, আমার মনে যে সব সংশয় ছিল, সেগুলো থেকে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। অত:পর উমর রা. তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে তাকে লোকজনের সাথে উঠবস করতে নিষেধ করে দিলেন যেন, লোকজনের মধ্যে তার খারাপ প্রভাব না পড়ে। [আল আজুররী ফিশ শরীয়াহ পৃষ্ঠা নং ১৫৩ ইবনে বাত্তা ফিল ইবানাহ, পৃষ্ঠা নং ৭৮৯, লালকাঈ ফি শরহে উসূলে ইতিকাদ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ ৪/৭০৬]
◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়ার বুকে কেন পাঠানো হয়েছিলো?
নবী-রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল, মানুষ যেন মহান আল্লাহর দাসত্ব মেনে নেয়। সুতরাং কেউ যদি মন যা চায় তাই প্রচার করে মানুষের দ্বীনকে নষ্ট করে দেয় তবে সেটি হবে নবী-রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও প্রেরণ করা হয়েছে এ জন্য যে, মানুষ যেন মহান আল্লাহর অনুগত দাসে পরিণত হয়, বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা মহান আল্লাহর সামনে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সঁপে দেয় এবং ইসলামের শিক্ষা ও দাবীকে বাস্তবায়ন করে।কোন ব্যক্তি যদি ইসলামের এই মূলনীতি ধ্বংস করার জন্য অগ্রসর হয় বা নিচের দিকে গর্ত খুঁড়ে যাতে ইসলামের ভীত ধ্বসে পড়ে তবে তাকে থামিয়ে দেয়া অপরিহার্য।
সুতরাং আমাদের ইসলামে নি:শর্ত বাক স্বাধীনতা বা দ্বিধাহীন মত প্রকাশের সুযোগ নেই। আপনি বিভিন্ন বিষয়ে মত দিতে পারেন কিন্তু তা যেন কুরআন, সুন্নাহ বা ইসলামের কোন মূলনীতিকে কটাক্ষ না করে না হয়। পক্ষান্তরে আপনি যদি এমন সব মত বা মতাদর্শ প্রচার করেন যা দ্বীনকে আঘাত করে বা দ্বীনের মর্যাদাহানি করে বা মানুষকে বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তবে সেটি হবে যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণের মূলনীতি ও মূল শিক্ষার পরিপন্থী।
◈ ইসলাম কেন মানুষকে দীনের বিষয়ে শর্ত হীনভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেয় নি?
সব মানুষের ঝোঁক-প্রবণতা সমান নয়। অধিকাংশ মানুষ আবেগ নির্ভর; দলিল নির্ভর নয়। অধিকাংশ মানুষ সব কিছুকে দলিল-প্রমাণ, কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ সব দিক বিবেচনা করে হিসেব করতে সক্ষম হয় না। আবেগী মানুষ আবেগ নির্ভর প্রভাব সৃষ্টিকারী কথাগুলোকেই গ্রহণ করে থাকে।অনেক সময় বিচারক দলিল-প্রমাণ না থাকলেও দু জন বিবাদীর মাঝে যে বেশী ভালো ভাবে তার সামনে যুক্তি-তর্ক ও বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারে তার পক্ষেই রায় দেয়। যেমন: সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّكُمْ تَخْتَصِمُونَ إِلَيَّ وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَلْحَنُ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ بِحَقِّ أَخِيهِ شَيْئًا بِقَوْلِهِ فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنْ النَّارِ فَلَا يَأْخُذْهَا
“তোমরা বিভিন্ন ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে আমার নিকট এসে থাকো। (তারপর দেখা যায়), আমার সামনে একজনের বিরুদ্ধে অন্যজন সুন্দরভাবে (তার দাবীর পক্ষে) যুক্তি-প্রমাণ পেশ করে। আর তার বক্তব্যের আলোকে আমি যদি কাউকে তার অন্য ভায়ের কোন হক দিয়ে দেই তবে তাকে যেন আমি এক টুকরা আগুন দিলাম। সুতরাং তার কর্তব্য হল, তা গ্রহণ না করা।” [বুখারি, হা/২৬৮০ ও মুসলিম হা/১৭১৩]
যদি দ্বীনের বিষয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয় তবে মানুষের মাঝ থেকে দ্বীন বিদায় নিবে, দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রে দুর্বলতা সৃষ্টি হবে, নবী-রাসূলদের আবির্ভাবের প্রভাব এবং সমগ্র বিশ্বচরাচরের মালিক ও স্রষ্টা মহান আল্লাহর দ্বীনের উপর সন্তুষ্ট থাকার বিষয়টি মানুষের মন থেকে উঠে যাবে।
আপনারা জানেন, বর্তমানে যে সব দেশে ধর্মীয় বিষয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে সে সব দেশের অনেক মানুষ বাতিল মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে দ্বীন থেকে দূরে সরে গেছে। (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন)। কারণ অধিকাংশ মানুষ আবেগ প্রবণ। তারা যাচায়-বাছাই না করে সহজভাবে কথা গ্রহণ করে।
তাই আলেমদের করণীয় হল, দ্বীনকে হেফাজতের স্বার্থে বাতিল পন্থীদের ভ্রান্ত কথা-বার্তার জবাব দেয়া। কিন্তু তা আসলে সব সময় সম্ভব হয় না। কারণ শর্ত হীনভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে নষ্ট করতে ভূমিকা পালন করে অথচ সব মানুষ এ সব ভ্রান্ত সংশয়ের জবাব দেয়ার ক্ষমতা রাখে না।
মোটকথা, আমরা বলব, ইসলামী শরীয়তের আবির্ভাব ঘটেছে সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে। পিতা, পুত্র, স্বামী, স্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, সাধারণ জনগণ, বিচারক, বিচার প্রার্থী, আমীর-ফকির, স্বাধীন, দাস, পুরুষ বা নারী সবার জন্য। ইসলাম সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। পিতা-মাতার অধিকার, সন্তানদের অধিকার, স্বামীর অধিকার, স্ত্রীর অধিকার, এক মুসলিমের কাছে অন্য মুসলিমের অধিকার, অমুসলিমের অধিকার। কোন কাফের যদি তোমার প্রতিবেশী হয় তাহলে তোমার উপর তার কিছু অধিকার রয়েছে। মুসলিম সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে বসবাসকারী অমুসলিমের অধিকার রয়েছে, ইসলামী সরকারের নিকট নিরাপত্তা লাভকারী অমুসলিমের অধিকার রয়েছে…।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি একটি ছাগল জবাই করলেন। (তারপর তার পরিবারের লোকদেরকে) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আমার ইহুদী প্রতিবেশীর নিকট গোস্ত উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন:
مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ
“জিবরাঈল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এত বেশী উপদেশ দিতেন যে, মনে হল তিনি হয়ত শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশীকে সম্পদের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন।” [বুখারী, হা/৬০১৪, ৬০১৫ ও মুসলিম, হা/২৬২৫]
তাহলে প্রমাণিত হল যে, ইসলামি শরীয়ত অর্থনৈতিক অধিকার, প্রতিবেশীর অধিকার, অমুসলিমের অধিকার ইত্যাদি সামগ্রিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। তবে এই শর্তে যে সেটা ইসলামি শরিয়ত যে কল্যাণ বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে আগমন করেছে তার স্বপক্ষে হতে হবে। ইসলামি শরিয়ত কেবল পার্থিব কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আগমন করে নি বরং আগমন করেছে ইহ ও পারলৌকিক উভয় জগতের কল্যাণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। এতে মানুষের জীবন-মরণ, দুনিয়া-আখিরাত উভয় দিকেই কল্যাণ রয়েছে।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ