মানবসমাজ নারী-পুরুষের একটি সংমিশ্রিত রূপ। ইসলামের আগমনের আগে পৃথিবীতে নারী ছিল লাঞ্ছনার প্রতীক। ইসলাম কন্যা-সন্তানকে অভিহিত করেছে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। নবী সা. বলেন: ‘যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা-সন্তান লালন-পালন করেছে, পুত্র-সন্তানকে কন্যা-সন্তানের ওপর প্রাধান্য দেয়নি, তাদের উত্তম আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে, তাদের বিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে, সে জান্নাত লাভ করবে।’ (আবু দাউদ)
নারী পরম শ্রদ্ধেয় মা, আদরের বোন, প্রেমময়ী পত্নী কিংবা পরম স্নেহভাজন মেয়ে হিসেবে পুরুষের চিত্তজগতকে আলোকিত করে। মহান আল্লাহর সৃষ্টির সহজাত প্রক্রিয়ায় নারী ব্যতীত বা নারীর সক্রিয় উপস্থিতি ছাড়া একটি সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও সৃজনশীল সমাজ আশা করা যায় না। তাই ইসলাম নারীকে শুধু সামাজিক মর্যাদাই দেয়নি, দিয়েছে অর্থনৈতিক অধিকারও। ইসলাম-পূর্ব সমাজে যৌতুকের অভিশাপ থাকলেও ইসলামে যৌতুক নামে কোনও অধ্যায় নেই। অধিকন্তু বিয়েতে যৌতুকেকর সম্পূর্ণ উল্টো ব্যবস্থা করেছে ইসলাম। পুরুষের কষ্টার্জিত অর্থ বিয়েতে বাধ্যতামূলকভাবে তুলে দিতে হয় নারীর হাতে। সর্বোপরি, ইসলাম উত্তরাধিকারে নারীকে যথাযথ অধিকার প্রদান করেছে।
ইসলামের আগমনের পূর্বে নারীর সম্পত্তির অধিকার ছিল না। সভ্যতার দাবিদার ইংল্যান্ডে ডাইনী বলে নারীকে পুড়িয়ে মারার আইন রদ করা হয় ১৭৩৬ সালে। যারা আজ সারা বিশ্বের প্রগতি ও আধুনিকতা নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচিতে রত, সেই ব্রিটেনে নারীর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। সে দেশের আইনে ১৮৮২ সালের আগ পর্যন্ত নারীর সম্পত্তি ছিল অবৈধ। বিয়ের আগেও যদি কোনও নারী চাকরি বা অন্য কোনও কাজ করে অর্থোপার্জন করত, তাহলে বিয়ে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যেত তার স্বামী। জার্মানি নারীদের ১৯০০, সুইস নারীদের ১৯০৭, অস্ট্রেলীয় নারীদের ১৯১৯ সালের আগে ছিল না কোনও উত্তরাধিকার সম্পত্তি। অথচ ইসলামের নবী, বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু হযরত মুহাম্মদ সা. ‘তথাকথিত সভ্য পৃথিবীর ১৪০০ বছর পূর্বে মরুভূমির প্রান্তে দাঁড়িয়ে উত্তরাধিকারসহ সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা ঘোষণা করেছিলেন দীপ্তকণ্ঠে। পবিত্র কুরআনুল করীমে ইরশাদ হয়েছে: ‘পুরুষ যা কিছু উপার্জন করে তার অংশ এবং নারী যা উপার্জন করবে তার মালিকানা নারীর।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৩২)
একজন পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নারী, তিনি বিবাহিত হন বা নাই হন, কারও সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সম্পদের মালিক হতে পারেন, মালিকানা হস্তান্তরও করতে পারেন। রয়েছে তার মা-বাবার পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ন্যায়সঙ্গত হক বা অধিকার।
উত্তরাধিকারে নারীর অধিকারের কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে পবিত্র কুরআন। যদি কোনও নারীর কোনও ভাই না থাকে, তাহলে তিনি (একা হলে) পিতার ছেড়ে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক পাবেন। এক ভাইয়ের অংশের অর্ধেক পাবে একজন বোন। অর্থাৎ যদি কেউ এ অবস্থায় মারা যায় যে, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে (আর কোনও উত্তরাধিকারী নেই)। তাহলে সমুদয় সম্পত্তি তিন ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ পাবে ছেলে আর একভাগ পাবে মেয়ে। এক ছেলে ও দুই মেয়ে থাকলে সমুদয় সম্পত্তি চার ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ পাবে ছেলে। আর বাকি দুই ভাগ পাবে দুই মেয়ে (প্রত্যেক মেয়ে একভাগ করে)। পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে: ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন- একজন পুরুষের অংশ দুইজন নারীর সমান। আর যদি শুধু নারীই হয় দুইয়ের অধিক, তাহলে তাদের জন্য ওই ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ। আর যদি (মেয়ে) একজনই হয়, তাহলে সে জন্য অর্ধেক।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১১)
স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতেও রয়েছে নারীর অধিকার। খ্রিস্টান ধর্মে বাবার মৃত্যুর পর যদি তার কোনও ছেলে সন্তান জীবিত থাকে, তবে মেয়ে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে কিছুই পাবে না। এ বিষয়টি প্রচলিত বাইবেলে উল্লেখ আছে। ছেলে দুইজন হলে বড় ছেলে পাবে ছোটজনের দ্বিগুণ। ছেলে না থাকলে সব সম্পত্তি মেয়ের। মেয়ে না থাকলে (মৃতের) ভাইয়ের। ভাই না থাকলে নিকটাত্মীয়ের। তবুও মৃত ব্যক্তির স্ত্রী কিছুই পাবে না। অথচ ইসলামে স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার খুব মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যদি কারও স্বামীর ইন্তেকাল হয় আর সে স্বামীর কোনও সন্তান না থাকে, তাহলে স্বামীর সমুদয় সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবেন স্ত্রী। আর যদি স্বামীর সন্তান থাকে, তাহলে স্ত্রী পাবেন এক-অষ্টমাংশ (আট ভাগের এক ভাগ) । পবিত্র কুরাআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘স্ত্রীদের জন্য তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ যদি তোমাদের কোনও সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তাহলে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১২)
সন্তানের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতেও রয়েছে মায়ের অধিকার। মা জীবিত থাকা অবস্থায় সন্তানের ইন্তেকাল হলে সন্তানের যদি কোনও সন্তান-সন্তুতি না থাকে, তাহলে সে সন্তানের সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পাবেন মা। আর যদি মৃত সন্তানের কোনও সন্তান-সম্ভতি থাকে, তাহলে মা সেই (মৃত) সন্তানের সম্পত্তির এক-ষষ্ঠমাংশ (ছয় ভাগের এক ভাগ) পাবেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘মৃতের কোনও ছেলে থাকলে মা-বাবার প্রত্যেকের জন্য (সন্তানের) ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ। যদি ছেলে থাকে এবং মা-বাবাই ওয়ারিশ হন, তবে মা পাবেন তিন ভাগের এক ভাগ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১)
এভাবেই ইসলাম উত্তরাধিকারে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ