সবাই ভাল মানুষের প্রশংসা করে। যাকে ভাল মানুষ বলে মনে করা হয় তাকে সবাই শ্রদ্ধাও করে। কেউ তাকে মন্দ বলে না। ভাল মানুষের পরিচয় কী? যে সব সময় সত্য কথা বলে, কখনও মিথ্যা কথা বলে না; যে কাউকে ঠকায় না, কারও ক্ষতি করে না, ওয়াদা খেলাফ করে না, কথা দিলে কথা রাখে, যে আপদে-বিপদে অন্যকে সাহায্য করে, হাসিমুখে কথা বলে, মিষ্টি ভাষায় কথা বলে, সুপরামর্শ দেয় এমন লোককে সবাই ভাল মানুষ মনে করে।
সমাজে এমন ভাল মানুষ এত কম কেন? বেশি লোকই এমন ভাল নয় কেন? সবাই যদি ভাল মানুষ হয় তাহলে সমাজে সবাই সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারে। ভাল মানুষের অভাবের কারণেই সমাজে এত অশান্তি দেখা যায়। চুরির ভয়ে সবাই অস্থির। সামান্য ব্যাপারে ঝগড়া-মারামারি লেগে যায়। কথায় কথায় গালাগালি শুরু হয়ে যায়।
আমরা যদি সবাই শান্তিতে থাকতে চাই তাহলে জানতে হবে যে, কী ভাবে ভাল মানুষ হওয়া যায়। এমনি এমনিতেই ভাল মানুষ হওয়া যায় না। এর জন্য চেষ্টা করতে হয়।
আমাদের শরীরটা কিন্তু আসল মানুষ নয়। এটা অন্য সব পশুর মতোই একটা পশু। কোনটা ভাল ও কোনটা খারাপ, তা কোনও পশুই বুঝতে পারে না। আমাদের আদরের গাভীটা ছুটে গিয়ে আমার প্রিয় বাগানে ঢুকলে সে সাজানো বাগানটা আমার সামনেই নষ্ট করে ফেলবে। কারণ, সে বোঝে না যে, এ কাজটা খারাপ। কিন্তু আমার বাড়ির কাজের ছেলেটা যদি আমার পকেট থেকে টাকা চুরি করতে চায় তাহলে আমার সামনে তা করবে না। কারণ সে জানে, এ কাজটা মন্দ। এতে প্রমাণিত হল, পশু ভাল-মন্দ বোঝে না; কিন্তু মানুষ বোঝে।
যে মানুষটি বোঝে, সে কিন্তু শরীর নয়। বাংলায় একে আমরা বিবেক বলি। কুরআনে এরই নাম রূহ। কুরআনে বলা হয়েছে, সব মানুষকে (রূহ) একসাথে সৃষ্টি করে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ সবাই বলেছে, ‘অবশ্যই তুমি আমাদের রব, আমরা এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিলাম।’
এ থেকে প্রমাণিত হল, সব রূহ বহু আগে একসঙ্গে সৃষ্টি করা হয়েছে; কিন্তু দুনিয়ায় সবাইকে একসঙ্গে পাঠানো হয়নি। যাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয় তার শরীর মায়ের পেটে তৈরি করা হয়। চারমাস পর ওই দেহে রূহকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই রূহ-ই হল আসল মানুষ। দেহ একটা হাতিয়ার মাত্র, যা মানুষকে দেওয়া হয়েছে।
মানুষ যে কাজই করে এই হাতিয়ার দিয়েই করে। সত্য কথা যে মুখ দিয়ে বলে মিথ্যা কথাও ওই মুখেই বলে। যে হাত দিয়ে ভাল কাজ করে, আবার সেই হাতে মন্দ কাজ করে। আমার হাত একটা হাতিয়ার মাত্র৷ সে নিজে নিজেই কাজ করে না। আমি যা করতে বলি, সে তাই করে। আমি মানে রূহ।
আমরা সবাই এ কথা জানি যে, যখন কোনও ভাল কাজ করা হয় তখন বিবেকের কাছে ভাল লাগে। যখন কোনও খারাপ কাজ করা হয় তখন মনে খারাপ লাগে বা বিবেক দংশন করে। এ বিবেকশক্তি অন্য কোনও পশুর নেই। তাই মানুষের দেহটা পশু হলেও, মানুষ পশু নয়।
মানুষ কোনটা ভাল ও কোনটা খারাপ তা বোঝে। তবু সে খারাপ কাজ করে কেন, এ কথাটা ভাল করে বুঝতে হবে। যখন খিদে লাগে তখন দেহটা খাবার চায়। আমি তাকে তখন খেতে দিই। আমি যখন রোযা রাখি তখন সে খাবার চাইলেও দিনের বেলা তাকে খেতে দিই না। তখন দেহের দাবি আমি মানি না। এতে প্রমাণিত হয়, রোযা দ্বারা রূহের শক্তি বাড়ে এবং দেহের দাবি অগ্রাহ্য করা সহজ হয়। রূহ দুর্বল হলে দেহের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।
তাহলে বোঝা গেল, রূহ আর দেহের মধ্যে লড়াই চলে। রূহ দুর্বল হলে দেহ যখন যা চায়, তাই দিতে বাধ্য হয়। রূহ সবল হলে দেহের মন্দ দাবি পূরণ করতে বাধ্য হয় না। তাই আল্লাহ তায়ালা রূহ বা বিবেককে সবল করার জন্য আল্লাহ, রাসূল সা. ও আখিরাতের প্রতি ঈমান এনে নামায ও রোখা আদায়ের হুকুম দিয়েছেন।
তাহলে দেখা গেল, যার বিবেক সবল সেই ভাল মানুষ। যে দেহের দাবিকে অগ্রাহ্য করার শক্তি রাখে, যে বিবেকের দাবি মেনে চলে, বিবেকের বিরুদ্ধে কোনও কাজ করে না, সেই সত্যিকার ভাল মানুষ। ভাল মানুষ হতে হলে বিবেকের কথামতো চলতে হবে। বিবেক যে কাজকে মন্দ বলে, দেহ দাবি করলেও তা অমান্য করতে হবে।
আমাকে যখন কেউ ভাল বলে প্রশংসা করে তখন আমার মনে কত ভাল লাগে। কেউ যদি আমাকে মন্দ বলে তাহলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। তাই আমাকে সব সময়ই যা ভাল তাই করতে হবে এবং যা মন্দ তা করব না বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি পশু হতে চাই না। আল্লাহ আমাকে মানুষ বানিয়েছেন। দেহের মন্দ দাবি মেনে আমি পশু হব কেন?
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ