‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’— বন্ধুত্বের মাধ্যমেই প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। বন্ধুত্বের মাধ্যমে বন্ধুর পরিচয় জানা যায়। বন্ধুত্বে ফুটে উঠে রুচিবোধ। তাই বন্ধু নির্বাচনে ইসলামেরও রয়েছে দিকনির্দেশনা।
এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, যারা ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান।
বিভিন্ন কারণে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সে বন্ধুত্ব সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। অপরদিকে নিজের স্বার্থের জন্য, উপকার লাভের আশায়, সামাজিক শ্রেণি ও জাতিগত পরিচিতির ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা বেশিদিন টেকে না। এসব ক্ষেত্রে কারও স্বার্থে কোনও রকম আঘাত লাগলেই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
হযরত রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন: ‘যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসলো, তো আল্লাহর জন্যই ভালোবাসলো, কাউকে ঘৃণা করল তো আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করল, কাউকে কিছু দিল তো আল্লাহর জন্যই দিল এবং কাউকে দেওয়া বন্ধ করল তো আল্লাহর জন্যই দেওয়া বন্ধ করল, তবে সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল। (মিশকাত শরীফ)
ইসলামের দৃষ্টিতে উপযুক্ত লোকদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করা এবং সারাজীবন ওই বন্ধুত্ব অটুট রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত। যে বন্ধুত্ব জীবনের আমূল পরিবর্তন করে দেয়, যে বন্ধুত্ব ছাড়া আমাদের চলা সম্ভব নয়, সে বন্ধুত্ব লালনের জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদিস গুরুত্ব দেয়।
শুধুমাত্র আল্লাহর আনুগত্য লাভের আশায় সব বিশ্বাসীকে ভালোবাসা ঈমানের দাবি। বেহেশতের সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যে অন্য সব উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বন্ধুর ভালোমন্দ জানার জন্য বন্ধুত্বের খাতিরে বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, মুনাফেকি ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করা অপরিহার্য। এগুলো হৃদয়ে পরিবর্তন সৃষ্টি করে এবং বন্ধুত্ব নষ্ট করে। পারস্পরিক বন্ধুদের মাঝে সামাজিক সৌজন্য চর্চা করা, তারা কোনও দাওয়াত দিলে তা রক্ষা করা, দয়ার বিনিময়ে দয়া জানানো, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, তাদেরকে খাটো বা বিদ্রুপ না করা বন্ধুত্ব অটুট রাখার পন্থা।
এছাড়া প্রকৃত বন্ধুর দায়িত্ব হল, সে কখনও কোনও কারণে বন্ধুর মনে কষ্ট থেকে বিরত দেওয়া অসাক্ষাতে কোনও বন্ধুর নামে খারাপ থাকবে, কথা বলবে না, সর্বোপরি সম্পর্ক রক্ষায় সে বিনয়ী হবে এবং আত্মম্ভরিতা। পরিত্যাগ করে চলবে।
জ্ঞানীরা বলেন, প্রকৃত বন্ধু আরেক বন্ধুকে যাবতীয় অসৎ ও মন্দ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখবে, তাকে সর্বদা সৎ কাজে উৎসাহিত করবে এবং বিরোধ দেখা দিলে নিজেই প্রথমে মিটিয়ে ফেলার জন্য উদ্যোগী হবে।
বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে হযরত রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: ‘একাকী নিঃসঙ্গতার চেয়ে ভালো বন্ধু উত্তম আর নিঃসঙ্গতা মন্দ বন্ধুর চেয়ে উত্তম।’ তার মানে হল, ভালো এবং যথার্থ বন্ধু যদি নাও থাকে তাহলেও তা একজন মন্দ ও অযোগ্য বন্ধু থাকার চেয়ে ভালো।
ভালো বন্ধুর গুণাবলী কি ইসলামের দৃষ্টিতে সেদিকে একবার নজর দেওয়া যাক। ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্য হল, বন্ধুটি বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই বুদ্ধি বিবেককে কাজে লাগানো। এই বিবেকবান বন্ধু সদুপদেষ্টা হয় এবং তার ওপর সবসময় আস্থা রাখা যায় কেননা এ ধরনের বন্ধু ভুল-ত্রুটি থেকে দূরে রাখে।
নীতি নৈতিকতাবোধ ভালো বন্ধুর আরেক বিশেষ গুণ। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ভালো বন্ধু সেই হতে পারে যে নৈতিক স্খলন থেকে দূরে থাকে। কেননা, দুশ্চরিত্রবান আর মন্দ কাজে অভ্যস্ত বন্ধু শেষ পর্যন্ত মানুষকে অবৈধ, অশোভন আর অনৈতিক কাজের দিকে নিয়ে যায়।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ