আব্দুর রহমান রাফাত পাশা কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আলোর কাফেলা ১ম খণ্ড
২। আলোর কাফেলা ২য় খণ্ড
৩। আলোর কাফেলা ৩য় খণ্ড
৪। আলোর মিছিল ১ম খণ্ড
৫। আলোর মিছিল ২য় খণ্ড
৬। আলোর মিছিল ৩য় খণ্ড
৭। আলোর মিছিল ৪র্থ খণ্ড
৮। আলোর মিছিল ৫ম খণ্ড
৯। আলোর মিছিল ৬ষ্ঠ খণ্ড
১০। নারী সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবন
১১। সাহাবীদের জীবন চিত্র ১ম খণ্ড
১২। সাহাবীদের জীবন চিত্র ২য় খণ্ড
১৩। সাহাবীদের বিপ্লবী জীবন
লেখক পরিচিতিঃ ড. আব্দুর রহমান রাফাত পাশা ছিলেন ইসলামি শিল্পতত্ত্ব ও সাহিত্য সমালোচনার আধুনিক রূপকার। আজ ১৮ জুলাই তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের এ দিনে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তিনি ইন্তেকাল করেন।
৬৬ বছরের ছোট্ট জীবনে আরবি ভাষায় রচিত ইসলামি সাহিত্য সম্ভারের জন্য শিল্পের বিচারে অনন্য এক শৈলী তৈরি করে গেছেন ড. রাফাত পাশা। ইসলামের সোনালি যুগের ইতিহাসকে বরেণ্য ও বিস্মৃত মনীষীদের জীবনী এবং ইসলামি কাব্য ও সাহিত্য সমালোচনার বয়ানে অভিনব পদ্ধতিতে হাজির করেছেন পাঠক সমাজের কাছে।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর সিরিয়ার আরিহা শহরে তাঁর জন্ম। জন্মের চার মাসের মাথায় বাবাকে হারান। চার বছর বয়সে মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে দাদার কাছেই লালিত পালিত হন। দাদার তখন শেষ-বয়স, পাঁচবেলা নামাজে যেতেন অনেক কষ্টে। রাফাত পাশা প্রতি ওয়াক্তেই দাদার হাত ধরে যেতেন মসজিদে।
পড়ালেখার বয়স হবার পর সিরিয়ার প্রাচীনতম শরয়ি শিক্ষাগার হালাব শহরের ‘মাদরাসা খুসরভিয়া’য় ভর্তি করা হয় আব্দুর রহমান রাফাত পাশাকে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা এখান থেকে সম্পন্ন করেন তিনি। তারপর মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করেন উসুলে ফিকহের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি। আল-আজহারে পড়াশোনা শেষ করে কায়রো ইউনিভার্সিটিতে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন শুরু শিক্ষকতা পেশা দিয়ে। সাহিত্যসাধনা ও গবেষণার পাশাপাশি জীবনভর এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। শুরুর দিকে কিছুদিন অবশ্যি সিরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আরবি ভাষার প্রধান পরিদর্শকের দায়িত্ব পেয়ে শিক্ষকতা থেকে দূরে সরে পড়েছিলেন। পরে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে দামেস্ক ইউনিভার্সিটির কলা অনুষদের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে আবারও ফিরে আসেন শিক্ষকতা পেশায়।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সৌদি আরব সফরে গেলে রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সউদ ইউনিভার্সিটি থেকে অধ্যাপনার প্রস্তাব পেয়ে সেখানে থিতু হয়ে যান। অধ্যাপনা শুরুর পরপর বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যারাবিক ক্রিটিক অ্যান্ড পাবলিকেশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিযুক্তি পান। আরবি ভাষার সেবা, সাহিত্যসাধনা ও গবেষণার পাশাপাশি মুহাম্মদ ইবনে সউদ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে রাফাত পাশা জীবনের বাকি ২২ বছর কাটিয়ে দেন।
আরবি ভাষাকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন কুরআনের ভাষা হিসেবে। এবং কুরআনের ভাষার সেবা ও শ্রীবৃদ্ধিতে উৎসর্গ করেছিলেন নিজেকে। আরবি ভাষায় রচিত ইসলামি সাহিত্যের বিশাল সম্ভারকে তিনি শিল্পের নিক্তিতে মেপে এর লালিত্য ও সৌন্দর্যের সুষমা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন পুরো বিশ্বকে। আধুনিক বিশ্বে তাই তিনিই প্রথম অনন্য ব্যক্তি, যিনি ইসলামি সাহিত্যকে শিল্পের মাপকাঠিতে স্বতন্ত্র একটি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে গেছেন সাহিত্যসমালোচনার কল্যাণে।
আধুনিক শিল্পতত্ত্বের সাথে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিতুলনামূলক প্রকল্প নাহবা মাজহাবিন ইসলামিয়ীন ফিল আদাবি ওয়ান নাকদ বইয়ে তিনি পাশ্চাত্যে প্রচলিত ও চর্চিত শিল্প চিন্তা ও তত্ত্বের পর্যালোচনা করেছেন এবং ইসলামী বিকল্প পেশ করেছেন। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি সমকালীন ইসলামী শিল্পতত্ত্বের জনক হিসেবে স্বীকৃতি পান।
ইসলামি সাহিত্যের শ্রী বৃদ্ধিতে ড. আব্দুর রহমান রাফাত পাশা প্রধানত দুটো ভাগে কাজ করেছেন। এক. ইসলামের স্বর্ণযুগে রচিত দাওয়াহমূলক কবিতা সম্ভারকে শিল্পের নিক্তিতে মেপে সমালোচনা। দুই. ইসলামের অতীত ইতিহাসকে খ্যাত ও বিস্মৃত মনীষীদের জীবনীর আদলে অনন্য রচনাশৈলিতে উপস্থাপন।
কাব্যসমালোচনাকে তিনি সময়ভিত্তিক বিস্তরভাবে আলোচনা করেছেন। প্রথমে নবিযুগ ও খেলাফতে রাশেদার সময়কার দাওয়ামূলক কবিতা, তারপর উমাইয়াযুগের কবিতা, তারপর আব্বাসি খেলাফতকালের কবিতা সম্ভারকে তিনটি ভাগে ভাগ করে শিল্পের নিক্তিতে মেপে আলোচনা করেছেন।
জীবনী সাহিত্যে আব্দুর রহমান রাফাত পাশা যে কাজগুলো করে গেছেন, তা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। অসংখ্য ভাষায় অনূদিত হচ্ছে তাঁর এ ধারার কর্মসম্ভার। বাংলা ভাষায়ও তাঁর জীবনী-সাহিত্যের প্রায় সবক’টি বই ইতিমধ্যে একাধিক প্রকাশনী থেকে অনূদিত হয়েছে।
‘সুয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা’ শিরোনামে হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুরু করে হজরত আমর বিন উমাইয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু অবধি শ্রুত-বিস্মৃত ১০৮ জন সাহাবির জীবনীকে অনন্য ভাষাশৈলিতে ১ হাজার পৃষ্ঠা কলেবরে তিনি সংকলন করেছেন। অনুরূপ ‘সুয়ারুম মিন হায়াতিত তাবেয়িন’ শিরোনামে ৫০০ পৃষ্ঠা কলেবরে নিয়ে এসেছেন ৩৭ জন তাবেয়ির জীবনাচার। ‘সুয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবিয়াত’ শিরোনামে মহিলা সাহাবিদের জীবনীও সংকলন করেছেন।
এ ছাড়া আদ-দীন আল-কাইয়িম, লুগাত আল-মুসতাকবিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ আরও বিপুল কাজ করে গেছেন তিনি।
ইসলামি দাওয়াহ সাহিত্যের ভিত্তিস্থাপক হিসেবে তাঁকে মূল্যায়ন করেছেন বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব শায়েখ আবুল হাসান আলি নদভি। এবং তাঁর কাজ ও প্রচেষ্টাকে সেভাবেই তিনি উপস্থাপন করেছেন। রাফাত পাশার ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসম্ভারকে আলোচ্য করে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বাসভবনে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হলে আবুল হাসান আলি নদভিসহ বরেণ্য ইসলামিক স্কলাররা তাঁর কাজের অপূর্ব মূল্যায়ন এবং অভিভূতি প্রকাশ করেন সেই সেমিনারে।
তারপরে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে, ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইউনিভার্সিটিতে এবং ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে নদওয়াতুল ওলামা লাখনৌতে দাওয়াহ সাহিত্যের ওপর আবুল হাসান আলি নদভি ও রাফাত পাশার সমন্বয়ে তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। নদওয়ায় অনুষ্ঠিত সেমিনার থেকে আবুল হাসান আলি নদভির উদ্যোগে দাওয়াহ সাহিত্যের পরিচর্যার লক্ষ্যে গঠিত হয় ‘রাবেতা আল-আদাবুল ইসলামি’। আব্দুর রহমান রাফাত পাশা সে সংগঠনের সহসভাপতি নিযুক্ত হন।
রাফাত পাশার বয়স তখন ৬৬ বছর। বার্ধক্যের পাশাপাশি সে বছর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্যারালাইজড হয়ে শরীরের একাংশ বিকল হয়ে যায় তাঁর। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময় ডাক্তারের পরামর্শে হাওয়া বদলের জন্য তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যান কিছুদিনের জন্য। এবং সেখানেই জুলাইয়ের ১৮ তারিখ মুতাবেক ১১ জিলকদ ১৪০৬ হিজরি শুক্রবার রাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যান ইসলামি সাহিত্যের অনন্য সেবক এ মহান মনীষী আলেম। ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক ‘ফাতেহা’ গোরস্তানে, যেখানে শুয়ে আছেন বিপুল সংখ্যক সাহাবি ও তাবেয়িনে কেরাম, যাঁদেরকে তিনি ভালোবাসতেন এবং যাঁদের পাশে একটু স্থান পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে রোনাজারি করতেন আল্লাহর দরবারে, তাঁদের পাশে পরদিন তাঁকে সমাহিত করা হয় বিনম্র শ্রদ্ধায়। রহমতুল্লাহি আলায়হি ওয়া আলায়হিম আজমাইন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ