মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ সন্তান-সন্ততি। নবজাতকের প্রত্যাশায় পারিবারিক আবহে দোলা দিয়ে যায় অপেক্ষার প্রহর- সবার মনে থাকে একটি সুস্থ-সুন্দর শিশুর আকাঙ্ক্ষা। নবজাতকের মাধ্যমেই মানব বংশ এগিয়ে যায় যুগ-যুগান্তরের পথচলায় শতাব্দী থেকে সহস্রাব্দে। মহান আল্লাহ্ বিশেষ অনুগ্রহ এটা। সন্তানাদির জন্ম প্রক্রিয়া থেমে গেলে তো মানুষ ও মানবতা বিলুপ্তির অন্ধকারে হারিয়ে যেত। তাই মহান আল্লাহ্ ‘মানব শিশু’-র জন্মরহস্য সম্পর্কে ধারণা দানের জন্য পবিত্র কুরআনের বাণীতে জানিয়ে দেন: ‘তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্তপিণ্ড থেকে।’ (সূরা আলাক, আয়াত: ০২)
সাধারণত প্রত্যেক নবদম্পতির স্বপ্ন, পরিকল্পনা আবর্তিত হয় তাদের বংশের দীপ জ্বালানোর জন্য। পরম করুণাময়ের দরবারে তাদের মোনাজাত থাকে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের এমন পরিজন (স্ত্রী-সন্তান) দান কর- যারা আমাদের চক্ষুর শীতলতা দানকারী হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৭৪)
শুধু কি তাই, সন্তান-সন্ততি হল পিতামাতার জন্য জাগতিক সৌন্দর্য ও সাফল্যের বাহন। ওদের মাধ্যমেই পিতামাতা নিজেদের জীবনের অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতার অবসান ঘটিয়ে সাফল্যের নতুন ভুবন রচনা করেন। কারণ স্বামী-স্ত্রীর প্রেমপূর্ণ উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসার স্মারক স্তম্ভ হল মানব-শিশুর প্রিয়মুখ ও পবিত্র আগমন । মহান আল্লাহ্ বলেন: ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনে সৌন্দর্য এবং সুখ-শান্তির বাহন ও উপাদান ।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত : ৪৬)
সন্তান উৎপাদন, প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে বংশধারা বিকশিত হয়। পারিবারিক নিরাপত্তা ও মমত্ববোধে একটি শিশু বেড়ে ওঠে আপন মহিমায়। নিজেকে মেলে ধরে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে, কেউ বা নিজেকে নিয়ে যায় অনন্যতার শিখর শীর্ষে। তখন তারাই হয়ে ওঠে পরিবার-সমাজের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-দেশান্তর বা বিশ্বের গর্বের ধন। মানব-শিশুর জন্ম তাই কখনওই অবহেলার নয়।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন: ‘আমি মানুষকে সুন্দর অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা জ্বীন, আয়াত: ৪)
তাই বলা যায়, সৃষ্টিগতভাবেই প্রত্যেক মানুষ মহান আল্লাহর সুন্দরতম ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষের কোনও কিছু করার নেই, সবই হয় মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এবং তিনি বলেন: ‘সেই মহিমান্বিত সত্তা, যিনি তোমাদের মাতৃগর্ভে গড়ে তোলেন যেমন খুশি তেমন করে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৬)
অভাব-দারিদ্র্যের চির অভ্যস্ত সংসারে নবজাতকের হাসিকান্না অনেক সময় অপ্রত্যাশিত। কিন্তু এ কথাও সত্য, আমাদের ঈমানের অংশ ‘রিযিকের মালিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন’। মহান আল্লাহ্ বলেন: “তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না। আমিই তাদের রিযিক দেব এবং তোমাদেরও। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহা অন্যায়।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৩১)
সুতরাং যার জন্ম হওয়ার সে জন্মাবেই, এতেও রয়েছে মহান আল্লাহর পরীক্ষা। কারণ, সম্পদশালী হলেই সন্তানের অধিকারী হওয়া যায় না । এ জন্যই মহান আল্লাহর সতর্কবাণী: ‘জেনে রেখো, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক মহাপরীক্ষা।’ (সূরা আনফাল, আয়াত : ২৮)
সন্তান-সন্ততি মহান আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ। চাইলেই সবাই তা পায় না, আবার না চাইতেই অনেকে লাভ করেন মহান আল্লাহ্র এই অনুগ্রহ। তাই প্রত্যেক সন্তানের পিতামাতার কর্তব্য হল সন্তানকে দেশ ও দশের প্রয়োজনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সন্তান-সন্ততি যেন পরিবার ও সমাজের জন্য দায় বা বোঝা না হয় সেজন্য সচেষ্ট থাকা পিতামাতার কর্তব্য। এটা একটি শিশুর জন্মগত অধিকার। এ জন্যই প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা. বলেন: ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সম্মান কর এবং তাদের ভালো স্বভাব-চরিত্র শিক্ষা দাও।’ (ইবনে মাজাহ)
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা. আরও বলেন: “কোনও পিতামাতা সন্তানকে উত্তম আদব-কায়দা ও স্বভাব-চরিত্রের শিক্ষাদান অপেক্ষা ভালো কোনও জিনিস দিতে পারে না।’ (তিরমিযী)
বস্তুত একটি সংসারের পূর্ণতা নির্ভর করে সন্তানাদি লাভ এবং প্রতিদানের মাধ্যমেও। প্রীতিপ্রেমের পুণ্যময় বাঁধনে, তখনই ওই সংসারে বিরাজ করে স্বর্গীয় সুখ। এ জন্যই মহান আল্লাহ দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন: ‘হে প্রভু! তুমি আমাকে ও আমার সন্তানদের নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও । প্রভু আমার! তুমি আমার দোয়া কবুল কর।’ (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত : ৪০)
মহান আল্লাহতায়ালা বিশ্বের সব অনাগত শিশুর সৌরভে সুরভিত করুন তাদের পিতা-মাতাকে এবং সুসন্তানের গর্বে সবাইকে করুন গর্বিত ও আনন্দিত – এটাই কামনা।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ