আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায কর্তৃক রচিত ইসলামী pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অত্যাবশ্যকীয় পাঠ সমূহ
২। অলি আওলিয়াদের অসিলা গ্রহণঃ ইসলামী দৃষ্টিকোণ
৩। আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন এবং এর পরিপন্থী বিষয় বর্জনের অপরিহার্যতা
৪। আল্লাহর দিকে আহবান ও দাঈর গুণাবলী
৫। ইসলাম ও বাস্তবতার আলোকে আরব জাতীয়তাবাদ
৬। ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ
৭। ইসলামী হিজাব বা পর্দা
৮। কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
৯। জাদুকর্ম জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম সম্পর্কে ইসলামী বিধান
১০। জানাযার কিছু বিধান
১১। নবী করীম সাঃ এর নামায আদায়ের পদ্ধতি
১২। নামায ও পবিত্রতা সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ প্রবন্ধ
১৩। নামায পড়ার পদ্ধতি
১১। নারী পুরুষে দেখাদেখি নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ ফাতওয়া
১৪। নিজ দেশের লোকদের সাথে রোযা রাখবে, না চাঁদ দেখা যে কোনো দেশের সাথে
১৫। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ অত্যাবশ্যক
১৭। পর্দা ও বেপর্দার বিধান
১৮। বিদআত ও এর মন্দ প্রভাব
১৯। বিদআত থেকে সাবধান
২০। মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দারসের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধান
২১। যাকাত ও সাওম বিষয়ক দুটি পুস্তিকা
২২। বিরোধিতার মোকাবিলায় ইসলামের কর্তনীতি
২৩। রাসূল সাঃ এর উপর আমলের আবশ্যকতা আর তার অস্বীকারকারীর কাফের হওয়া
২৪। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
২৫। শাবানের পনেরতম রজনী উদযাপন শরীয়তের দৃষ্টিভংগি
২৬। সঠিক আকীদা বিশ্বাস ও যা এর পরিপন্থী
২৭। সালাত ও পবিত্রতা সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ প্রবন্ধ
২৮। সুন্নাতে রাসুল আঁকড়ে ধরা এবং বিদাত থেকে দুরে থাকা অপরিহার্য
২৯। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারত
লেখক পরিচিতিঃ শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহু-তায়ালা) সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি, তিনি যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম, যুগশ্রেষ্ঠ ফক্বিহ ও মুহাদ্দিস, শাইখুল ইসলাম এবং ইমাম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ। তার প্রকৃত নাম আব্দুল আযীয। পিতা-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান। তিনি তাঁর উর্ধ্বতন ৪র্থ পিতামহ ‘বায’-এর নামানুসারে সারা বিশ্বে ‘বিন বায’ নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি ১২ জিলহাজ্ব ১৩৩০ হিজরী মোতাবেক ২২ নভেম্বার ১৯১০ সালে সৌদী ‘আরবের রাজধানী রিয়াদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি এখানেই বেড়ে উঠেন, তাঁর কৈশর জীবন অতিবাহিত করেন। ছাত্র জীবনের প্রথম দিকে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ভালো ছিলো। কিন্তু ১৩৪৬ হিজরীতে (১৯২৭ খৃঃ) ১৬ বৎসর বয়সে তাঁর চোখে রোগ দেখা দেয় এবং তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। ১৩৫০ হিজরীর মুহাররম মাসে (১৯৩১ খৃঃ) মাত্র বিশ বছর বয়সে তাঁর দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন: “আমার দৃষ্টিশক্তি হারানোর উপরও আমি আল্লাহর সর্ববিধ প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহর কাছে দো‘আ করছি, তিনি যেন দুনিয়া ও আখিরাতে আমাকে উত্তম প্রতিদান দান করেন।”
ইলম অর্জনঃ অতি অল্পবয়সেই তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই তিনি কুরআনুল কারীমের হিফয সম্পন্ন করেন। মক্কার খ্যাতনামা ক্বারী শাইখ সা‘দ ওয়াক্কাস আল-বুখারীর (রহঃ) নিকট ‘ইলমে তাজবীদ তথা বিশুদ্ধভাবে কুরআনুল কারীম পাঠের নিয়মাবলী শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর রিয়াদের তৎকালীন শ্রেষ্ঠ বিদ্বানগনের নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করেন এবং শরীয়তের বিভিন্ন শাখায় গভীর পান্ডিত্য অর্জন করেন। মাত্র বিশ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে লোপ পেলেও প্রখর মেধাশক্তির কারণে লেখাপড়ায় কোন সমস্যা হয়নি। তিনি সৌদি ‘আরবের তৎকালীন গ্র্যান্ড মুফতী আশ-শায়খ মোহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন ‘আব্দুল লতীফ আলুশ-শায়খ সহ দেশের প্রখ্যাত ‘উলামায়ে কেরামের নিকট থেকে ‘আরবী ভাষা সহ শরী‘য়তের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি তাঁর নিকট একাধারে দশ বছর ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে হাতে ক্বলমে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ছহীহ বুখারী ও মুসলিম কয়েকবার খতম করেন। এতদ্ব্যতীত কুতুবে সিত্তাহর অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থ এবং মুসনাদে আহমাদ ও দারেমীর বেশীরভাগ অংশ অধ্যায়ন করেন। তিনি গোটা বিশ্বে মুফতী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তার নিকট পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রশ্ন আসতো যেগুলোর তিনি নিয়মিত জওয়াব দিতেন। ইখতেলাফী মাসয়ালার ক্ষেত্রে তিনি কুরআন সুন্নাহকে প্রাধান্য দিতেন, কোন আলেম বা ফকীহর কথাকে তোয়াক্কা করতেননা। তার নিকট হক্ব একটি, বহু নয়। তিনি মাসয়ালার ক্ষেত্রে সলফে সালেহীনের মতকে প্রাধান্য দিতেন। তাদের মতকে কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা বিশ্লেষণ করে ফাতাওয়া প্রদান করতেন।
কর্মজীবনঃ অনিচ্ছা সত্ত্বেও ১৩৫৭ হিজরীতে তৎকালীন গ্র্যান্ড মুফতী শায়খ মোহাম্মাদ বিন ইবরাহীমের (রহঃ) পরামর্শক্রমে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি রিয়াদের অদূরে আল-খারজ এলাকার বিচারপতি নিযুক্ত হন। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর বিচারপতির দায়িত্ব পালনের পর ১৩৭২ হিঃ সনে রিয়াদ প্রত্যাবর্তন করেন এবং রিয়াদ মা‘হাদে ‘ইলমীতে শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত হন। এর এক বছর পর তিনি রিয়াদের শরী‘আহ কলেজে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ নয় বছর এই কলেজে তিনি ‘ইলমুল ফিক্বহ, ‘ইলমূত তাওহীদ ও ‘ইলমুল হাদীছ প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। ১৩৮১ হিজরীতে যখন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন শায়খ বিন বায উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ১৩৯০ হিজরী সালে তিনি চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। ১৩৯৫ হিজরী সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল থাকেন। ঐ বৎসরই রাজকীয় এক ফরমানের অধীনে তাঁকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় “ইসলামী গবেষণা, ফাতওয়া, দা‘ওয়াত ও ইরশাদ” (দারুল ইফতা) নামক সৌদী ‘আরবের সর্বোচ্চ দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগ করা হয়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি পূর্ণ নিষ্ঠা, আমানতদারী ও সাফল্যের সাথে এই মহান দায়িত্ব পালন করে গেছেন। উক্ত দায়িত্বের পাশাপাশি শায়খ বিন বায (রহঃ) আরো অনেক দ্বীনী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। যেমন-
১। প্রধান: সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ, সৌদী আরব।
২। প্রধান: স্থায়ী ইসলামী গবেষণা ও ফাতওয়া কমিটি।
৩। প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও সদস্য: রাবেতায়ে ‘আলম আল ইসলামী।
৪। প্রেসিডেন্ট: আন্তর্জাতিক মাসজিদ বিষয়ক উচ্চ পরিষদ।
৫। উচ্চ পরিষদ সদস্য: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
৬। প্রেসিডেন্ট: ইসলামী ফিক্বহ পরিষদ, মক্কাহ ।
৭। উচ্চ কমিটি সদস্য: দা‘ওয়াতে ইসলামিয়্যাহ, সৌদী ‘আরব।
শাইখের ইলমি খেদমতঃ শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) ছোট-বড় অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা ও সংকলন করে গেছেন। এসব গ্রন্থের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ কলেবরের হল, তাঁর মূল্যবান টীকা সম্বলিত ছহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারী যা ১৩ খন্ডে সমাপ্ত এবং তাঁর নিজস্ব ফাতাওয়া সংকলন, যা ৮ খন্ডে সমাপ্ত। এছাড়াও তাঁর মূল্যবান গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে
- সঠিক ধর্ম বিশ্বাস ও তার পরিপন্থী বিষয়
- আল্লাহর দিকে আহবানের ফযীলত, হুকুম এবং দা‘য়ীর চরিত্র
- ছুন্নাতে রাসূল আঁকড়ে ধরা এবং বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা অপরিহার্য
- হাজ্জ, ‘উমরা ও যিয়ারত সম্পর্কিত বিষয়াদির বিশ্লেষণ
- ইসলামের দৃষ্টিতে‘আরব জাতীয়তাবাদ’
- আল্লাহর পথে জিহাদ
- সফর ও হিজাবের বিধান
- ছালাত বিষয়ে তিনটি পুস্তিকা
- কুরআন ও রাসূল (ছাঃ) এর সমালোচনাকারীদের বিষয়ে ইসলামের বিধান
- আল্লাহ ব্যতিত অন্যের নিকট সাহায্যপ্রার্থীর বিষয়ে শরীয়তের বিধান
- যাদুকর ও গনকদের সত্যতা
- আরব জাতীয়তাবাদের সমালোচনা
- সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ইত্যাদি পুস্তক-পুস্তিকা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও শারহুল ‘আক্বীদাতিত ত্বাহাবীয়াহ, বুলুগুল মারাম, তাক্বরীবুত-তাহযীব সহ আরো কয়েকটি গ্রন্থের উপর তাঁর গুরুত্বপূর্ণ টীকা রয়েছে। শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বাযের বিভিন্ন বক্তৃতা, রচনা, প্রশ্নোত্তর ও পত্রাবলী একত্রে সংকলন করা হয়েছে। মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাত মুতানাওয়ী‘আহ (ﻣﺠﻤﻮﻉ ﻓﺘﺎﻭﻯ ﻭﻣﻘﺎﻻﺕ ﻣﺘﻨﻮﻋﺔ) নামে এই সংকলন সমগ্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
‘আল্লামা শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) রাষ্ট্রিয় ও অন্যান্য বিভিন্ন রকমের গুরুদায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও ‘দাওয়াত, দারস, ওয়াজ-নসীহত ও সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ প্রদানের কর্তব্য থেকে কখনও বিচ্যুত হননি আল-খারজ এলাকায় বিচারপতি থাকাকালে সেখানে তিনি দারছ ও ওয়াজ নসীহতের হালাক্বা (চক্র) চালু করেন। রিয়াদ প্রত্যাবর্তনের পর রিয়াদস্থ প্রধান জামে মাসজিদে দারস প্রদানের যে কার্যক্রম চালু করেছিলেন তা মৃত্যুর কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত যথানিয়মে চালিয়ে গেছেন। মদীনায় অবস্থানকালীন সেখানেও তিনি হালাক্বায়ে দারস চালু করেছিলেন। সাময়িকভাবে কোন শহরে স্থানান্তরিত হলে সেখানেও তিনি হালাক্বায়ে দারস চালু করতেন। তাঁর যাবতীয় দ্বীনী খিদমাতকে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তাঁর মীযানে হাসানাহ তে রাখুন, আর এ সবের দ্বারা উম্মতে মুসলিমাহ্কে উপকৃত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন।
ইন্তেকালঃ ১৯৯৯ সালের ১৩ ই মে বৃহস্পতিবার ভোর রাত ৩-টায় তায়েফের বাদশাহ ফায়সাল হাসপাতালে ৮৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ছেলে আহমাদ ইবনে বায মৃত্যুকালীন স্মৃতিচারণ করেন এভাবে যে, “যে রাতে তার পিতা মারা যান, সে রাতেও তিনি প্রফুল্ল ও প্রানবন্ত মেজাজ নিয়ে ফাতাওয়া প্রদানের জন্য বসেছিলেন। তিনি নিজে ফোনে বিভিন্ন জনের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলছিলেন”।
অতঃপর মৃত্যুর পর তাঁর লাশ দাফনের জন্য মক্কায় নিয়ে আসা হয়। এবং ১৪২০ হিজরীর ২৮ মুহাররাম বাদ জুম’আ পবিত্র কা’বা চত্ত্বরে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আযীয ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গসহ বিশ্বের লক্ষ লক্ষ শোকবিহ্বল মুছল্লি উক্ত জানাযার ছালাতে অংশ গ্রহন করেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসে অধিষ্ঠিত করুন। তাঁকে পরকালে পরম সুখ-শান্তি ও উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন!
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ