মুমিনের কাছে পার্থিব জীবন পরকালের শস্যক্ষেত। মুমিন পার্থিব জীবন থেকে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করে। এ জীবনে যার পাথেয় যত বেশি হবে, পরকালে তার মর্যাদা তত বেশি হবে। পরকালের পাথেয় হলো নেক আমল বা পুণ্যের কাজ।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেকে যা করে সে অনুসারে তার স্থান রয়েছে এবং তারা যা করে সে সম্পর্কে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৩২)
উল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মানুষের ভালো ও মন্দ সব কাজেরই একটি স্তর রয়েছে। আল্লাহর দরবারে তা তার কাজগুলো স্তরসহ লিপিবদ্ধ রাখা হবে।
মুমিনের জন্য সাধারণ মর্যাদাঃ আল্লাহ পরকালে মুমিনদের জন্য অবিশ্বাসীদের ওপর সাধারণ মর্যাদা ও সম্মান ঘোষণা করবেন।
যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাঁর কাছে উপস্থিত হবে মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা, স্থায়ী জান্নাত—যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এ পুরস্কার তাদেরই যারা পবিত্র।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ৭৫-৭৬)
আমল অনুসারে উঁচু হবে স্তরঃ মানুষের আমল অনুসারে তার মর্যাদার স্তর নির্ধারণ করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়, অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে নিজের সম্পদ ও জীবন দিয়ে সংগ্রাম করে তারা সমান নন। যারা নিজের সম্পদ ও জীবন দ্বারা সংগ্রাম করে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের ওপর মর্যাদা দিয়েছেন; আল্লাহ সকলকে কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (সুরা নিসা, আয়াত : ৯৫)।
বিশেষ শ্রেণিতেও থাকবে মর্যাদার তারতম্যঃ সাধারণ মানুষের ভেতর যেমন মর্যাদার পার্থক্য হবে, তেমন নবীদের মতো বিশেষ স্তরেও থাকবে মর্যাদার তারতম্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘এই রাসুলগণ, তাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে, যার সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন, আবার কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৩)
মর্যাদাবানদের জন্য বহুতল জান্নাতঃ পরকালে মুমিনরা তাদের মর্যাদা অনুসারে বহুতল জান্নাত লাভ করবে। মর্যাদার পার্থক্য অনুসারে উঁচু হবে তাদের জান্নাত।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই জান্নাতবাসীরা তাদের ওপরের বালাখানার বাসিন্দাদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে উজ্জ্বল দীপ্তিমান নক্ষত্র দেখতে পাও। এটা হবে তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্যের কারণে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৫৬)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, (কিয়ামতে) কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে কোরআন পাঠ করতে করতে ওপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে সেভাবে পাঠ করতে। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৬৪)
জান্নাতের স্তর কতগুলোঃ গবেষক আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে জান্নাতের বহু স্তর আছে। যা সংখ্যায় অগণন। যদিও কোনো কোনো হাদিসে নির্ধারিত সংখ্যা উল্লেখ পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতে এক শ স্তর রয়েছে, যা আল্লাহ তাঁর পথে সংগ্রামকারীদের জন্য প্রস্তুত করেছেন। দুই স্তরের দূরত্ব আসমান-জমিনের দূরত্বের সমান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৯০)
জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর ফিরদাউসঃ জান্নাতুল ফিরদাউস পরকালে মুমিনের জন্য সর্বোচ্চ স্তর। নবী করিম (সা.) মুমিনদের এই স্তর কামনা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফিরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) এটাও বলেছেন, এর ওপরে আছে দয়াময়ের আরশ। আর সেখান থেকেই জান্নাতের নহরগুলো প্রবাহিত হচ্ছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৯০)
সর্বোচ্চ জান্নাত যারা পাবেঃ পবিত্র কোরআনে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে, যারা সবচেয়ে মর্যাদাবান জান্নাত ফিরদাউস লাভ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের নামাজে, যারা অসার কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে, যারা জাকাতদানে সক্রিয়, যারা নিজের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসিরা ছাড়া—এতে তারা নিন্দনীয় হবে না, আর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী; যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, যারা নিজেদের নামাজে যত্নবান থাকে, তারাই হবে অধিকারী—অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে।’ (সুরা মুমিনিনুন, আয়াত : ১-১১)
সর্বনিম্ন জান্নাত ও তার অধিকারীঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিম্নতম জান্নাতি ওই ব্যক্তি, যার মুখমণ্ডলটি আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের দিক থেকে সরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দেবেন। তার সামনে একটি ছায়াযুক্ত গাছ উদ্ভাসিত করা হবে। সে ব্যক্তি প্রার্থনা জানাবে, হে প্রতিপ্রালক, আমাকে এ গাছ পর্যন্ত এগিয়ে দিন। আমি এ ছায়ায় অবস্থান করতে চাই। তখন আল্লাহ তাকে বিভিন্ন নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন : এটি চাও। এভাবে যখন তার সব আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেন, যাও তোমাকে এসব সম্পদ প্রদান করলাম, সেই সঙ্গে আরো ১০ গুণ দান করলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তখন লোকটি জান্নাতে তার গৃহে প্রবেশ করবে। তার সঙ্গে ডাগর আঁখিবিশিষ্ট দুজন হুর তার পত্নী হিসেবে প্রবেশ করবে। আর তারা বলবে, সব প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য এবং আমাদের আপনার জন্য সৃষ্টি করেছেন। লোকটি বলবে, আমাকে যা দেওয়া হয়েছে, এমন আর কাউকে দেওয়া হয়নি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫২)
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ