সীরাতে রাসুল সা. বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অনুপম আদর্শ – হাসান আবদুল কাইয়ূম
২। অমুসলিম মনুষীর চোখে আমাদের প্রিয় নবী – উবায়দুর রহমান খান নদভী
৩। আর রাহীকুল মাখতুম – ছফিউর রহমান মোবারকপুরী
৪। আল কুরআনে নব্যুয়াত ও রিসালাত – মুহাম্মদ আব্দুর রহীম
৫। উদ্ভাসিত মোস্তফা চরিত – আবদুল্লাহ বিন সাঈদ
৬। কাসাসুল আম্বিয়া – আল্লামা ইবনে কাসীর
৭। কাসাসুল কোরআন – হিফজুর রহমান সিত্তহারবী
৮। কুরআন করিমে নবী চরিত – ডঃ তাহের আল কাদেরী
৯। কুরআন-হাদীস ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে রাসুল সাঃ এর মিরাজ – মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
১০। কুরআনের আয়নায় বিম্বিত রাসুল সঃ – অধ্যাপক মফিজুর রহমান
১১। কেমন ছিলেন রাসূলুল্লাহ – আব্দুল মালেক আল-কাসম
১২। খতমে নবুয়্যাত – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৩। খাসায়েসুল কুবরা – জালালুদ্দিন আবদুর রহমান সূয়ুতি
১৪। খ্যাতিমানদের চোখে মহানবী সা. – মুহাম্মদ জোহরুল ইসলাম
১৫। চিনে নাও তুমি তোমার নবী সাঃ কে – ড. আদেল আশ শিদ্দী ও ড. আহমাদ আল মাযইয়াদ
১৬। তোমাকে ভালোবাসি হে নবী – গুরু দত্ত সিং
১৭। দয়া ও ভালোবাসার অনন্য বিশ্ব নবী – আবু আব্দুর রহমান
১৮। নবী করীম সাঃ এর ওসিয়াত – আবুল ফযল আবদুর রহমান সুয়ূতী
১৯। নবী জীবনী – মক্তব তাওয়িয়াতুল জালিয়াত আল জুলফি
২০। নবী জীবনের আদর্শ – অধ্যাপক গোলাম আযম
২১। নবী জীবনের বৈশিষ্ট্য – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
২২। নবী সাঃ এর মহিমান্বিত জীবনের শেষ একশ দিনের অসিয়াত সমূহ – সালেহ ইবন আব্দুর রহমান
২৩। নবী সাঃ এর গুণাবলী – মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
২৪। নবী সাঃ প্রীতি ও তার নিদর্শন সমূহ – ডাঃ ফাযল ইলাহী
২৫। নবীজীর হাসি – আবদুল গনী তারিক
২৬। নবীয়ে রহমত – আবুল হাসান আলী নাদভী
২৭। নবীর কুরআনী পরিচয় – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
২৮। নবুয়াতি মুহাম্মাদী – মুহাম্মদ আব্দুল্লাহহেল কাফি
২৯। পবিত্র কুরআনের আলোকে মুহাম্মদ সাঃ এর রিসালাত – ড. মোঃ আব্দুল কাদের
৩০। পরশমণি – এ. বি. এম. এ. খালেক মজুমদার
৩১। পুথি সাহিত্যে মহানবী সাঃ – আবুল কাসেম ভূঁইয়া
৩২। প্রশ্নোত্তরে সীরাত – মুহাম্মদ শফী উসমানী
৩৩। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ – ড. মুহাম্মদ ইনায়েতুল্লাহ সুবহানী
৩৪। প্রিয় নবীর আদর্শ জীবন – আব্দুল মান্নান তালিব
৩৫। প্রিয় নবীর সান্নিধ্যে চল্লিশ আসর – আদেল বীন আলি আশ-শিদ্দী
৩৬। প্রিয়নবীর পূর্বপুরুষগণের ইসলাম – ইমাম আহমদ রেযা
৩৭। প্রেমের নবী – এডভোকেট সালমা ইসলাম
৩৮। ফাযায়েলে রহমাতুললিল আলামীন – মুহাম্মদ ইকবাল কিলানী
৩৯। বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ – ড. হিশাম আল-আওয়াদির
৪০। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মুহাম্মদ সাঃ – ড. জাকির নায়েক
৪১। বিরুদ্ধবাদীদের সাথে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আচরণ – ড. মুহাম্মদ আব্দুল কাদের
৪২। বিশ্ব সভ্যতায় রসূলে আকরাম – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী
৪৩। বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা
৪৪। বিশ্ব নবী প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র আদর্শ – সিরাজুল ইসলাম আলি আকবর
৪৫। বিশ্বনবী মুহাম্মদ – যায়নুল আবেদিন রাহনোমা
৪৬। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনাদর্শ – ড.আহমাদ ইবন উসমান আল মাযইয়াদ
৪৭। বিশ্বনবী সাঃ এর এলমে গায়েব – ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ুতি
৪৮। বিশ্বনবীর সাঃ মুজিযা – ওয়ালিদ আল-আযামী
৪৯। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাঃ এর-১০০ উপদেশ – শেখ ফরিদ আলম
৫০। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী – মাইকেল এইচ হার্ট
৫১। বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ দঃ – মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
৫২। মহা নবী সাঃ এর কীর্তিমালা পূর্বপুরুষদের কথা – ড. আবু বকর রফীক
৫৩। মহানবী – মুহাম্মদ নূরুল হুদা
৫৪। মহানবী ও শিশু – এ জেড এম শামসুল আলম
৫৫। মহানবী সাঃ এর শাশ্বত পয়গাম – আবু জাফর
৫৬। মহানবী সাঃ ও সভ্য পৃথিবীর ঋণ স্বীকার – আবুল হাসান আলী নাদভী
৫৭। মহানবী সা. এর চিঠি চুক্তি ভাষণ – এমদাদুল হক চৌধুরী
৫৮। মহানবী সা. এর প্রতিরক্ষা কৌশল – আকবর খান
৫৯। মহানবীর আদর্শ জীবন – আবু সালমান আব্দুল হামীদ আল মাদানী
৬০। মহানবীর ভাষণ – মুহাম্মদ নুরুজ্জামান
৬১। মহানবীর সাঃ অর্থনৈতিক শিক্ষা – অধ্যাপক মুহাম্মদ আকরাম খান
৬২। মহানবীর সাঃ মহাজীবন – আবু জাফর
৬৩। মহানবীর সাঃ মিরাজ ও বিজ্ঞান – মোঃ মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা
৬৪। মহানবীর সাঃ সীরাত কোষ – খান মোসলেহউদ্দীন আহমদ
৬৫। মহাবিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব – ড. ঈসা মাহদী
৬৬। মাদারিজুন নুবুওয়াত – আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী
৬৭। মানব গোষ্ঠীর জন্য নবী মুহাম্মদ সাঃ এর রিসালাতের প্রয়োজনীয়তা – আদেল আলি আশশিদ্দী
৬৮। মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাঃ – নঈম সিদ্দিক
৬৯। মাহবুবে খোদা – মাহমূদুর রহমান
৭০। মুহাম্মদ (মহানবীর সাঃ এর জীবনী) – ক্যারেন আর্মস্ট্রং
৭১। মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাঃ – অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
৭২। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ – আব্দুল হামীদ ফাইযী
৭৩। মোহম্মদ চরিত – শ্রী কৃষ্ণ কুমার মিত্র
৭৪। যে ফুলের খুশবতে সারা জাহান মাতোয়ারা – আশরাফ আলী থানভী
৭৫। রহমতে দো আলম সা. – আবদুস সালাম
৭৬। রাসূল মুহাম্মদ সাঃ – যায়নুল আবেদিন রাহনোমা
৭৭। রাসূল মুহাম্মদ সাঃ এর মুজেজা – হারুন ইয়াহইয়া
৭৮। রাসূল সাঃ এর ২০০ সোনালী উপদেশ – আব্দুল মালিক মুজাহিদ
৭৯। রাসূল সাঃ এর ২৪ ঘণ্টা – মোঃ রফিকুল ইসলাম
৮০। রাসূল সাঃ এর মন্ত্রীপরিষদ – আব্দুল আজিজ শানাবি
৮১। রাসূল সাঃ এর গৃহে একদিন – আব্দুল মালেক আল কাসেম
৮২। রাসূল সাঃ এর সমকালীন আরবের অবস্থা ও তার মক্কী জীবন – ড. মোঃ আব্দুল কাদের
৮৩। রাসূল সাঃ এর সরকার কাঠামো – ড. মুহাম্মদ ইয়াসীন মাজহার সিদ্দিকী
৮৪। রাসূল সাঃ এর সাহচর্য – সালেহ ইবন আবদিল্লাহ আদ দারওয়ীশ
৮৫। রাসূল সাঃ এর হাসি কান্না ও জিকির – মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আত তুআইজিরী
৮৬। রাসূল সাঃ যেভাবে রমযান যাপন করেছেন – ফায়সাল বিন আলি আল বাদানী
৮৭। রাসূল সাঃ লেনদেন ও বিচার ফায়সালা করতেন যেভাবে – মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আততুআইজিরী
৮৮। রাসূল সাঃ সম্পর্কে ১০০০ প্রশ্ন – সাইয়েদ মাসুদুল হাসান
৮৯। রাসূলগণকে আল্লাহ তায়ালা কি দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন – অধ্যাপক গোলাম আযম
৯০। রাসূলল্লাহ সাঃ যেভাবে তাবলীগ করেছেন – আহসানুল্লাহ বিন সানাউল্লাহ
৯১। রাসূল্লাহর বিচারালয় – ইমাম কুরতুবী রহঃ
৯২। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বিপ্লবী জীবন – আবু সালীম মুহাম্মদ আব্দুল হাই
৯৩। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মক্কা বিজয় – মোহাম্মদ আবদুল্লাহ
৯৪। রাসূলুল্লাহর শিক্ষানীতি – ড. মুহাম্মদ রেজাউল করীম
৯৫। রাসূলুল্লাহ সাঃ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর – ড. আদেল আশ শিন্দী
৯৬। রাসূলুল্লাহর বিচার ব্যবস্থা – আবদুস শহীদ নাসিম
৯৭। রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত – মুহাম্মদ আব্দুর রহীম
৯৮। রাসূলুল্লাহর শিক্ষাদান পদ্ধতি – ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ
৯৯। রাসূলুল্লাহর সাঃ পত্রাবলীঃ সন্ধিচুক্তি ও ফরমান সমূহ – আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ
১০০। রাসূলুল্লাহর সাঃ বিপ্লবী জীবন – আবু সালীম মুহাম্মদ আব্দুল হাই
১০১। রাসূলুল্লাহর সাঃ মক্কার জীবন – মতিউর রহমান নিজামী
১০২। রাসূলুল্লাহর সাঃ শিক্ষাদান পদ্ধতি – মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ
১০৩। রাসূলুল্লাহর সা. এর ১০০০ সুন্নত – খালীল আল হোসেনান
১০৪। রাসূলে কারীম সা সামাজিক বিপ্লবের স্বরূপ – সিরাজুল ইসলাম আলি আকবর
১০৫। রাসূলের চোখে দুনিয়া – আহমাদ ইবনু হাম্বাল
১০৬। রাসূলের প্রশ্ন সাহাবীদের জবাব সাহাবীদের প্রশ্ন রাসুলের জবাব – আল্লামা সালমান নাসিফ আদ দাহদুহ
১০৭। রাসূল সাঃ কে যেভাবে ভালোবাসতে হবে এবং তাকে কটাকাষকারীর বিধান – মুহম্মদ ইকবাল বিন ফাখরুল
১০৮। রাসূল্লাহর সাঃ বিদায়ী ভাষণ – খন্দকার আবুল খায়ের
১০৯। রাহমাতুল্লিল আলামীন – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১১০। সমরবিদ হিসাবে মুহাম্মদ সাঃ – ড. মোঃ আব্দুল কাদের
১১১। সর্বযুগের বিশ্বস্ত নবী – কামাল উদ্দিন মোল্লা
১১২। সহীহ হাদীসের আলোকে রাসুল সাঃ এর নবুওয়তের প্রমাণ – মুকবিল ইবন হাদী আল ওয়াদিয়ী
১১৩। সিরাত থেকে শিক্ষা – ড. আব্দুল্লাহ আযযাম
১১৪। সীরাত বিশ্বকোষ ১ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১১৫। সীরাত বিশ্বকোষ ২য় খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১১৬। সীরাত বিশ্বকোষ ৩য় খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১১৭। সীরাত বিশ্বকোষ ৪র্থ খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১১৮। সীরাত বিশ্বকোষ ৫ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১১৯। সীরাত বিশ্বকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২০। সীরাত বিশ্বকোষ ৭ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২১। সীরাত বিশ্বকোষ ৮ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২২। সীরাত বিশ্বকোষ ৯ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২৩। সীরাত বিশ্বকোষ ১০ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২৪। সীরাত বিশ্বকোষ ১১ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২৫। সীরাত বিশ্বকোষ ১২ম খণ্ড — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২৬। সীরাতুন নবী সাঃ ১ম খণ্ড — ইবনে হিশাম
১২৭। সীরাতুন নবী সাঃ ২য় খণ্ড — ইবনে হিশাম
১২৮। সীরাতুন নবী সাঃ ৩য় খণ্ড — ইবনে হিশাম
১২৯। সীরাতুন্নবী সাঃ সংখ্যা ২০১২ — মোশারাফ হোসেন খান
১৩০। সীরাতুল মুস্তফা সা. ১ম খণ্ড — আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী
১৩১। সীরাতুল মুস্তফা সা. ২য় খণ্ড — আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী
১৩২। সীরাতুল মুস্তফা সা. ৩য় খণ্ড — আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী
১৩৩। সীরাতুল রাসুল সাঃ – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
১৩৪। সীরাতুল হাবীব – আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
১৩৫। সীরাতে ইবনে হিশাম – ইবনে হিশাম
১৩৬। সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া – মুফতি মুহাম্মদ শফী
১৩৭। সীরাতে খাতিমুল আম্বিয়া – আব্দুল লতিফ চৌধূরী
১৩৮। সীরাতে রসূল আকরাম সা. – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী
১৩৯। সীরাতে রাসূলের পয়গাম – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী
১৪০। সীরাতে রাহমাতুল্লিল আলামীনঃ প্রবন্ধ সংকলন
১৪১। সীরাতে সরওয়ারে আলম ১ম খণ্ড — সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৪২। সীরাতে সরওয়ারে আলম ২য় খণ্ড — সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৪৩। সীরাতে সরওয়ারে আলম ৩য় ও ৪র্থ খণ্ড — সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৪৪। সীরাতে সরওয়ারে আলম ৫ম খণ্ড — সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৪৫। সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালীন – দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
১৪৬। স্বস্তির বাতি ঘর – মাসুদা সুলতানা রুমী
১৪৭। হাদীসের আলোকে মুহাম্মদ সাঃ – হুসাইন বিন সোহরাব
সীরাত পরিচিতিঃ এ বিশাল পৃথিবী যখন ঘন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছিল, জাহেলিয়াতের ভয়াল অন্ধকার যখন ক্রমেই গ্রাস করে নিচ্ছিল সমগ্র পৃথিবীকে, যখন গোত্রে গোত্রে ছিল দলাদলি, হানাহানি ও রক্তারক্তির প্রবল স্রোতধারা, মানুষে মানুষে ছিল রক্ত, বর্ণ, ভাষা ও আভিজাত্যের দুর্লঙ্ঘনীয় প্রাচীর; ঠিক তেমনি বিভীষিকাময় মুহূর্তে মহান রাব্বুল আলামীন সিরাজুম মুনিরার চির উজ্জ্বল রোশনি দিয়ে রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে প্রেরণ করেন। অর্থাৎ সৌদি-আরবের মক্কা নগরীতে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই রবিউল আউয়ালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। দুনিয়ায় আসার পূর্বেই পিতা আব্দুল্লাহ মারা যান। আবার ছয় বছর বয়সে মা আমিনাও মারা যান। পিতা-মাতা উভয়কে হারিয়ে মহানবী (সা.) অসহায় ও এতিম হয়ে পড়েন।
মায়ের মৃত্যুর পর তিনি দাদা আব্দুল মুত্তালিবের আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন। কিন্তু আট বছর বয়সে দাদাকেও হারান। এরপর চাচা আবু তালিবের কাছে লালিত পালিত হন। বয়স যখন কৈশোরে তখন একটি সত্য ও সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শান্তিকামী যুবকদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘হিলফুল ফুযুল’ অর্থাৎ শান্তিসংঘ। হিলফুল ফুযুলের উদ্দেশ্য ছিল আর্তমানবতার সেবা করা। অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা। শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। গোত্রে গোত্রে সম্প্রীতি বজায় রাখা ইত্যাদি।
মহানবী (সা.) এর প্রজ্ঞা ও যোগ্যতার সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খুওয়াইলিদের কন্যা খাদিজা (রা.) লোক মারফত মহানবীকে (সা.) তাঁর ব্যবসায়ে নিযুক্ত করার প্রস্তাব করেন। চাচা আবু তালিবের সাথে আলাচনা করে মহানবী (সা.) তাতে রাজী হলেন। সততা ও চারিত্রিক মাধুর্যতা দেখে মক্কার সম্পদশালী মহিলা খাদিজা (রা.) নিজ ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব মহানবী (সা.) এর উপর অর্পন করেন। অতি কম সময়ে খাদিজার (রা.) ব্যবসায় পরিচালনায় মহানবী (সা.) সততার অনন্য নজীর স্থাপন করেন। খাদিজা (রা.) মহানবী (সা.) এর বিশ্বস্ততা ও কর্মদক্ষতায় অভিভূত হন, মুগ্ধ হন। তারপরই খাদিজা (রা.) নিজেই মহানবী (সা.) এর সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান।
চাচা আবু তালিবের সম্মতিতে খাদিজার (রা.) সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এ সময় তাঁর বয়স ২৫ বছর হলেও খাদিজার (রা.) বয়স ছিল ৪৫ বছর এবং তিনি ছিলেন বিধবা ও তিন সন্তানের জননী।
নবুয়্যাত প্রাপ্তির সময় খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। মহানবী (সা.) যেন পূর্বাপেক্ষা আরও বেশী নির্জনতা প্রিয় হয়ে ওঠেন। এ সময় তাঁর বয়স চল্লিশ বছর পূর্ণ হয়ে যায়। হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় একাধারে কয়েকদিন আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। হঠাৎ এক রাতে জিব্রাইল (আ.) তাঁর কাছে ওহী নিয়ে আসেন। জিব্রাইল (আ.) কুরআনের আয়াত পাঠ করে শুনালেন- ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ তখন তিনি নবুয়্যাত প্রাপ্ত হন।
তিনি হেরা পর্বত থেকে রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ থেকে মানুষের সামগ্রিক জীবনের জন্য এমন আদর্শবানী ও শিক্ষা নিয়ে আসেন যা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মানুষদেরকে পরিণত করে ইতিহাসের সর্বোত্তম স্বর্ণমানবে, যা মানবতাকে সন্ধান দিলো ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের সামগ্রিক সফলতার এক সোনালী স্মরণীয় মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাজনৈতিক জীবন ধীরে ধীরে হয়ে উঠল সুস্থ, সুন্দর, প্রশান্ত ও কল্যাণময়। মানুষে মানুষে গড়ে উঠল সাম্য, মৈত্রী, মানবতা, একাগ্রতা ও ভ্রাতৃত্বের মহান বন্ধন। মানব সমাজে সঞ্চারিত হলো শান্তি, সততা ও মমতার শীতল বায়ু। যাঁর বিরুদ্ধে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ, তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য, ভদ্রতা, শালীনতা, মানবসেবা ও পরোপকারিতা সব মানুষের কাছে ছিল পরিচিত। তাঁর লজ্জাশীলতা কুমারী তরুণীকেও হার মানাত। তাঁর আমানতদারি ও বিশ্বস্ততা চরম শত্রুর মনেও বন্ধুত্বের আবেদন সৃষ্টি করত। তাঁর স্পষ্টবাদী বিজ্ঞ ফয়সালা নিষ্ঠুর জালিমের মনেও সৃষ্টি করত অব্যাহত কম্পন, তাঁর নির্ভরযোগ্য অভিভাবকত্ব ছিল এতিম, বিধবাদের ভারসাম্যপূর্ণ আশ্রয়। আত্মীয়দের সুখ-দুঃখের চিরসাথী ছিলেন তিনি। কেউ কোনো দিন মুখ খুলে বলতে পারনেনি যে তিনি কখনো কোনো অসঙ্গত কথা বলেছেন; কারো সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন বা জীবনে কোনো মুহুর্তে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।
মূলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সার্বজনীন সর্বস্তরের আধার। যার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন- হে হাবিব! নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। কী অতুলণীয় মর্যাদা তাঁর! অতি স্বল্প সময়েই সত্যবাদিতার জন্য তিনি সাদেক, ন্যায়নিষ্ঠ ও নির্মল চরিত্রগুণে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হন। নবীজী (সা.) যে চরিত্রের উচ্চশিখরে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এ চরিত্রে কালিমা লেপন করা সম্ভব ছিল না। মানুষ এ চরিত্রকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে। তাই তাঁর পৃথিবীতে আগমন থেকে গমন পর্যন্ত পুরো জীবন নিষ্কলুষ পবিত্রতার বাস্তব উদাহরণ।
সীরাত অর্থ জীবনী। সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলো সকল মানবের শ্রেষ্ঠ মানব, প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলোকময় জীবনসৌন্দর্য। নশ্বর এই পৃথিবীতে অবস্থানকালে সংঘটিত তাঁর প্রতিটি পদচারনা, উচ্চারণ, সমর্থন ও সন্তুষ্টি জ্ঞাপন সবই পবিত্র সীরাতের বরকতময় উপাদান। অধিকন্তু তাঁর নববী ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া সেই প্রথম যুগের সোনালী অংশ- বরকতপূর্ণ ইলাহী শেষ বিকেলের রক্তিম আলো। যে আলোয় পথ খুঁজে পেয়েছে পরবর্তীকালের সকল সত্যসন্ধানী- বিশ্বময় সকল মুসলমান।
আবিশ্ব বিস্তৃত বেশুমার মানব কাফেলার যে অংশটি মুমিন ও মুসলিম বলে পরিচিত তাদের সেই পরিচিতি মূলত সীরাতুন্নবী (সা.) এর কিঞ্চিত ঝলক মাত্র। কারণ, নবীর (সা.) সীরাত আদতে পবিত্র ইসলামের বাস্তব প্রতিমূর্তি। নবীর জীবনী ও সীরাতের জোতির্ময় দিকনির্দেশনা ছাড়া শরীয়তের যথার্থ উপলব্ধি, আল্লাহপ্রাপ্তি কিংবা সফলতার নাগাল পাওয়া অবান্তর বৈ কিছু নয়। এই প্রেক্ষিতেই বলা যায়, সীরাতুন্নবী (সা.) সমগ্র মানব জাতির সম্মিলিত সম্পদ। কাফির-মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই এই দুয়ারের ফকির; সকলেই এই প্রদীপের মুখাপেক্ষী। পথপ্রাপ্ত মুমিন তার অভীষ্ট মনযিলে পৌঁছতে পারবে না সীরাতুন্নবীর দীপ্ত নির্দেশনা ছাড়া। মুসলিম জীবনের একমাত্র পাথেয় যেমন পবিত্র সীরাত, কাফের গোষ্ঠীর একমাত্র মুক্তিসনদও এই মহান সীরাত।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সকল নবীই স্ব-স্ব যুগের সেরা মানব। বরং স্বীয় আমলের অন্য সকল সত্যসন্ধানী, আদর্শপ্রেমী মানবগোষ্ঠীর জন্য শ্রেষ্ঠ মডেল, সর্বোত্তম নমুনা। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিখুঁত সুন্দর আদর্শ যা সে যুগের সকল মানুষের অনুসরণের নিমিত্তেই প্রেরিত। এর চাইতেও দ্রুবসত্য হলো হযরত আদম (আ.) থেকে মানব জাতির মানবসুলভ যে আদর্শের সূচনা হয়েছিল তার পুর্ণাঙ্গ ও সুন্দরতম বিকাশ লাভ করেছে প্রিয়তম রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জীবন ধারায়। ফলে তা কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের একমাত্র আদর্শ হিসেবে গৃহীত হয়েছে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে। উসওয়াতুন হাসানা’র অভিধায় ভূষিত হয়েছে তাঁর প্রভাময় জীবনধারা মহান ইলাহী ভাষায় আল-কুরআনে। অধিকন্তু মহান এই সীরাতের যথাযথ বিকাশ, প্রচারে ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও বাস্তবায়ন হয়েছে পরম কুদরতের অদৃশ্য তত্ত্ববধানে- যা অন্য কোন নবী কিংবা রাসূলের বেলায় ঘটেনি।
এই নশ্বর ধরাতে একজন মহামানবের ভাবনা, কল্পনা, কথা, সিদ্ধান্ত ও কর্মময় জীবন সংসার কেমন হবে তার পুর্ণাঙ্গ, পরিচ্ছন্ন, পবিত্র ও বিস্তৃত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে প্রিয় নবীজীর জীবন পাতায়। সবুজ কচি জীবন থেকে শুভ্র পৌর জীবন নাগাদ জীবন পরিক্রমার প্রতিটি ধাপের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেছে তাঁর সীরাতে। তাঁর সীরাতে দীপ্তিময় হয়ে ভেসে উঠেছে সমাজ জীবনের সকল নাগরিকের বিচিত্র চিত্র।
রাখালের প্রতিকৃতি তিনি, তিনি সৌম্যশান্ত গৃহস্বামী। সচেতন কর্মচঞ্চল সওদাগর কখনো, কখনো সমাজসেবী দরদী সংগঠক। শান্তি-সন্ধির কোমলতায় নমিত কখনো কখনো অপরাধ দমনে স্বহস্তে অস্ত্রধারী, সুশৃঙ্খল জীবনে বিশ্বাসী নাগরিক, আবার তিনিই শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কর্মক্লান্ত রাষ্ট্রপতি। আল্লাহর সন্তুষ্টির বিমল আলোয় উদ্ভাসিত এক পূর্ণাঙ্গ জীবনী গ্রন্থই তাঁর সীরাত, মঙ্গলময় জীবনধারা। এ যেন আল্লাহর কিতাব আল-কুরআনেরই সচিত্র ব্যাখ্যাগ্রন্থ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ যে আদেশ-নিষেধ নাযিল করেছেন তারই ছবি এঁকেছেন নবীজীর (সা.) জীবন পাতায়। তাই কুরআনে আল্লাহ কী বলেছেন তা যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে হলে দ্বারস্ত হতে হবে পবিত্র সীরাতের। অধিকন্তু কুরআনের বক্তব্য উপলব্ধিতে আমি কতখানি সফল তার মাপকাঠিও সীরাত। ইসলামের যাবতীয় শিক্ষা, নীতি ও পয়গামের নির্ধারিত ছক এই সীরাত। এর ভেতর থেকেই গ্রহণ করতে হবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও যাবতীয় কর্মপন্থা। সুতরাং যে কোন মুসলমানের জন্য সীরাত চর্চা, গবেষণা ও অবিরাম অধ্যয়নের অপরিহার্যতা ভাষাতীতভাবে স্বীকৃত ও অত্যাবশ্যকীয়। পরম এই বাস্তবতার আলোকেই হযরাতে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও পরবর্তীকালের সম্মানিত হাদিসবেত্তাগণ পুরো জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সীরাতুন্নবী (সা.) তথা হাদীসে রাসূলের (সা.) সংরক্ষণ ও সংকলনে।
বলাবাহুল্য, সীরাতুন্নবীর সিংহভাগ অংশ সংরক্ষিত হয়েছে হাদিসের মাধ্যমেই। অবশিষ্ট অংশ আমরা পেয়েছি শামায়েল সম্পর্কিত গ্রন্থণালয়ে। সীরাত চর্চা, সীরাত গ্রন্থ পাঠ, ইসলাম গ্রহণ, উপলব্ধি, ঈমানকে সুদৃঢ় করে, বিশ্বাসকে করে শানিত, উম্মোচিত করে পরকাল চিন্তার রুদ্ধ-দ্বারসমূহ, জীবনে বিপ্লব আনে, সুস্থতা ও পবিত্রতা আনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। এ কারণেই পূর্বসূরী মহান বুযুর্গানে দ্বীন এর জীবনে এক মহান কর্মসূচি ছিল সীরাত চর্চা। দেখা গেছে, আজকের পৃথিবীতে এমন কোন উন্নত স্বীকৃত ও সাদৃত ভাষা নেই যে ভাষায় সীরাত চর্চা হয়নি। কিংবা সে ভাষায় সীরাত গ্রন্থ রচিত হয়নি। অধিকন্তু নন্দিত সীরাত ভান্ডারে সজ্জিত করেছেন তাঁরা তাঁদের লাইব্রেরীসমূহ। সীরাতের গল্প শুনিয়ে আলোকময় বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে চেয়েছেন সময়ের নতুন প্রজন্মকে। ফলশ্রুতিতে তাদের পারিবারিক পরিবেশ আমোদিত হতো সীরাতের মদির গন্ধে। তাঁদের সন্তানরা বড় হয়ে উঠত কালোত্তীর্ন প্রতিষ্ঠায়। তাঁরাই আজ আমাদের মহান পূর্বসূরী, আমাদের গৌরবময় অতীত। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য, যতদিন মুসলিম সমাজে এই সীরাত চর্চার ধারা অব্যাহত ছিল ততদিনে তাঁদের মুসলিম সমাজে বয়ে চলেছে ইসলামের নিবিড় শান্ত-শান্তিপ্রবাহ, সমাজের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে চরিত্রের মূর্তিমান প্রতিচ্ছবি অলি-আউলিয়ার জামাত, নিয়মিত সাক্ষাৎ করেছে ইসলামের সত্য সুন্দর আদর্শময়তার। তারা সুযোগ পেয়েছে নববী চরিত্রের আলোকে নিজেদের চরিত্রকে গড়ে তোলার।
তাই ইসলাম সম্পর্কে তাদের ভাবনা ছিল পরিচ্ছন্ন, স্পষ্ট ও সংশয়মুক্ত। ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব ছিল তাঁদের কাছে সব কিছুর উর্ধ্বে। ইসলামের জন্য যে কোন ত্যাগই ছিল তাঁদের দৃষ্টিতে সৌভাগ্যের আয়োজন। কারণ, তাঁরা তো ইসলামের তরে নবীজীর বর্ণনাতীত ত্যাগ ও কুরবানী সম্পর্কে ছিলেন সম্যক ওয়াকেফহাল। পক্ষান্তরে যখনই আমরা সীরাত চর্চায় অমনোযোগী হয়েছি, সীরাতের বিমল জ্যোতি থেকে দূরে সরে পড়েছি, তখনই ইসলাম সম্পর্কে অস্পষ্টতার শিকার হয়েছি। সংশয়ের শিকার হয়েছি। ইসলামের বিধি-বিধানে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছি আর দ্বীনের স্বার্থে জীবন দানের সামান্য চেতনাবোধও হারিয়ে ফেলেছি। জীবন হয়ে পড়েছে তখন এক বদ্ধজলাশয়। যেখানে আবেদন নেই, চাঞ্চল্য নেই, প্রাণ নেই, নেই প্রাণজাগার পয়গাম। অবশ্য এর চাইতেও দুঃখজনক সত্য হলো, পরবর্তীকালের কিছু ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতজনও শিকার হয়েছেন এই স্খলনের। তারাও ওসব বিজ্ঞানভিত্তিক আপত্তির ধোঁয়া দর্শনে আক্রান্ত হয়েছেন হীনমন্যতার। সক্রিয় হয়েছেন কুরআন-হাদিসের আকাশ-পাতাল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে ‘খোদা-ভগবান’ উভয়কে সন্তুষ্ট রাখতে। কখনও মুহাদ্দিসসুলভ সমালোচনার মাধ্যমে হাদীসে রাসূলকে দুর্বল, জাল ইত্যাদি বলয়ে আবদ্ধ করে সাধুবাদ জানাতে চেয়েছেন মানবরচিত বিজ্ঞানকে। এভাবেই সীরাত চর্চার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে এক মহাসংকট। অথচ হাদীস-কুরআনের স্পষ্ট জ্ঞানের ছোঁয়া যারা পায়নি, তারা বিজ্ঞানসিদ্ধ বস্তুবাদী ব্যাখ্যাকে অধিক প্রাধান্য দিতে আগ্রহী। কারণ, তা সাধারণের বিবেকপ্রসূত। পক্ষান্তরে, নবীর বক্তব্যের সম্পর্ক ঊর্ধ্বজগতের সাথে। তার যে কোন বক্তব্যের নিগূঢ় রহস্য যে কারো বোধের ঊর্ধ্বে হতে পারে এবং তা স্বাভাবিক।
সংকটময় এই পেক্ষাপটে সীরাত প্রেমিকদেরকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে সীরাত চর্চার জন্যে তিনি যে লেখকের দারস্থ হচ্ছেন তিনি কুরআন-হাদীস সম্পর্কে পুর্ণাঙ্গ ওয়াকেফহাল কি-না। অধিকন্তু তাঁর ব্যক্তিজীবনে সীরাতুন্নবী (সা.) এর ঝলক পরিলক্ষিত হয় কি-না। কারণ, যার ব্যক্তি জীবনে সীরাতের আলো নেই তিনি নবীজীবনের প্রতি আন্তরিক নন। তাঁর হাতে সীরাতের পবিত্র ভান্ডার নিরাপদ নয়।
সারকথা, সীরাত গবেষণা, সীরাত চর্চা মুমিন-মুসলিমের আত্মার খোরাক, জীবন চলার পাথেয়। একমাত্র দিক-নির্দেশনা। তাই তা হতে হবে যথার্থ, যত্ন ও সতর্কতামন্ডিত। এ ক্ষেত্রে কোন পড়ুয়া, গবেষক, আলেমের তত্ত্বাবধান গ্রহণ করাই সর্বাধিক নিরাপদ। সীরাত লেখক কোন শিক্ষায় শিক্ষিত তার উপস্থাপন পদ্ধতি কতটা ইসলামধর্মী, তার পরিবেশনা কতটা হাদীস ও পূর্বসূরীর বর্ণনা নির্ভর। সন্দেহ নেই যুক্তিদগ্ধ, বিজ্ঞাননির্ভর আলোচনা মহাপান্ডিত্যের সনদ হতে পারে- সীরাতের উৎস নয়।
সীরাতের মূল উপাদান হলো, রাসূল (সা.) এর জীবন-বৃত্তান্ত। তিনি ছয় দশকেরও বেশীকাল এই পৃথিবীতে ছিলেন। তাঁর পাশে সমবেত হয়েছিলেন লক্ষাধিক ভক্ত-অনুরক্ত। তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি সকল বিষয় অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে তুলে ধরেছেন তাঁরা পরবর্তীকালের মুসলমানের সমীপে। নবীজীবনের কথামালা, কর্মসম্ভার, ইশারা-ইঙ্গিত, সমর্থন, চাল-চলন, ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের সকল প্রকারের ঘটনাবলী বিশ্বস্তসূত্রে বর্ণিত হয়েছে হাদিসের গ্রন্থসমূহে। পাশাপাশি সমকালে আন্তর্জাতিক পরিবেশ, জীবনবোধ, জীবনব্যবস্থা, সামাজিক, অর্থনৈতিক নীতি দর্শনও স্থান পেয়েছে প্রাচীন বিশ্বস্ত সীরাত গ্রন্থগুলোতে। যার আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করলেই সীরাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব মানব জীবনে তার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের অত্যাবশ্যকীয়তা ভাস্কর হয়ে ওঠে। সীরাত চর্চা, গবেষণা ও অবিরাম অধ্যয়ন অত্যাবশ্যকীয়।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ