পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু কর্তৃক রচিত pdf বই ডাউনলোড করতে নিচের বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আত্মচরিত
২। কিশোর ইন্দীরা গান্ধীকে লেখা পন্ডিত জহরলাল নেহরুর চিঠি
৩। দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া
৪। বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গে
৫। ভারত সন্ধানে
লেখক পরিচিতিঃ
পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু (जवाहरलाल नेहरू) (১৪ই নভেম্বর, ১৮৮৯—২৭শে মে, ১৯৬৪) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, আদর্শবাদী, পণ্ডিত এবং কূটনীতিবিদ নেহেরু ছিলেন একজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। লেখক হিসেবেও নেহেরু ছিলেন বিশিষ্ট। ইংরেজিতে লেখা তার তিনটি বিখ্যাত বই- ‘একটি আত্মজীবনী’, ‘বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র’, এবং ‘ভারত আবিষ্কার’ চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে।
জন্মঃ প্রখ্যাত ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্ম এলাহাবাদে, ১৮৯৮ খ্রিঃ ১৪ ই নভেম্বর। তাঁর পিতা মতিলাল নেহরু, মাতা স্বরূপরানী। মতিলাল নেহরু ছিলেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী। ভারতের রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেবার ফলে বহুবার তাঁকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল।
মতিলাল নিজে জাতীয়তাবোধে প্রাণিত হলেও তাঁর পরিবারের পরিবেশ ছিল বিদেশানুগত। এই আবহাওয়াতেই ধনীর বিলাস ও আদরে লালিত হয়েছিলেন জওহরলাল।
শিক্ষাজীবনঃ তাঁর বাল্যের শিক্ষালাভ হয়েছিল ইংরাজ টিউটরের কাছে। ১৯০৫ খ্রিঃ জওহরলালকে বিলেত পাঠানো হল। সেখানে হ্যারোস্কুল, ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষে লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স – এ সর্বমোট সাত বছর অধ্যয়ন করেন। রসায়ন, ভূতত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে পড়তে তিনি সহসা উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়া আরম্ভ করেন। পরে লন্ডন থেকে ১৯১২ খ্রিঃ দেশে ফিরলেন ব্যারিষ্টার হয়ে।
বিবাহ জীবন ও পরিবারঃ এলাহাবাদে আইন ব্যবসায়ে কিছুকাল লিপ্ত থাকার সময়ে দিল্লির ময়দাকল মালিকের কন্যা কমলার সঙ্গে জওহরলালের বিবাহ হয়। ১৯১৭ খ্রিঃ তাদের কন্যা ইন্দিরার জন্ম হয়। ১৯২৫ খ্রিঃ এই দম্পতি এক পুত্রসন্তান লাভ করেন, কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই তার মৃত্যু হয় ৷ বিলেত যাবার আগের বছরে জওহরলাল পিতা মতিলালের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো পর্যন্ত তাঁর মধ্যে স্বাদেশিক চেতনার কিছুমাত্র উন্মেষ ঘটেনি।
রাজনৈতিক জীবনঃ দেশে ফিরে আসার পরেও তিনি ছিলেন বিদেশী ভাবধারায় ভাবিত। স্বদেশী চেতনা তাঁকে প্রথমদিকে প্রভাবিত করতে পারেনি। অথচ তাঁর পিতা মতিলাল অগ্রগণ্য স্বদেশ সেবক হিসাবে যথেষ্টই সুপরিচিত ছিলেন। ইতিমধ্যে গান্ধীজি বিদেশ থেকে ব্যারিষ্টারি পাশ করে দেশে ফিরে আসেন। ১৯১৬ খ্রিঃ ডিসেম্বরে লক্ষ্ণৌতে কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয়, সেখানেই গান্ধীজির সঙ্গে জওহরলালের সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটে।
বাল্যাবধি জওহরলাল অ্যানি বেসান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তাঁকে ১৯১৭ খ্রিঃ জুন মাসে ব্রিটিশ সরকার নানা নিপীড়নের পর অন্তরীণ রাখার আদেশ করে। এর ফলে অ্যানিবেসান্তের হোমরুলপন্থী জওহরলালের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তিনি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন। এইভাবেই জওহরলালের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পদার্পণের সূত্রপাত হয়। অবশ্য জওহরলালের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তিলক বা বেসান্তের নীতিকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি। তাই গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে তাঁর নিজের মনের সায় থাকায় তিনি গান্ধীজিকেই অনুসরণের সিদ্ধান্ত করেন।
সেই সময়ে রাওলাট অ্যাক্ট বা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডকে ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে চলছিল প্রবল আলোড়ন। এসব ঘটনায় জওহরলালের চিত্ত গভীরভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মতিলালের প্রতিষ্ঠিত The Independent পত্রিকার কর্ণধার রূপে জওহরলাল জ্বালাময়ী ভাষায় এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলেন। এর পরেই তিনি প্রত্যক্ষভাবে কংগ্রেসে যোগদান করলেন। ১৯২০ খ্রিঃ তিনি এলাহাবাদ কংগ্রেস কমিটির সহ – সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পরে ক্রমে কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটিতে বিভিন্ন পদের অধিকারী হন।
১৯২৩ খ্রিঃ হন সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্পাদক, ১৯২৮ খ্রিঃ সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯২৯ খ্রিঃ লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। লাহোর অধিবেশনেই পূর্ণ স্বরাজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৩৬, ১৯৩৭, ১৯৪৬, ১৯৫১, ১৯৫৩ এবং ১৯৫৪ খ্রিঃ যথাক্রমে লক্ষ্ণৌ, ফৈজপুর, দিল্লি, হায়দরাবাদ ও কল্যাণী কংগ্রেসের অধিবেশনে জওহরলাল আরও ছয়বার কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন।
এইভাবে ক্রমে তিনি কংগ্রেসকে একটি নির্দিষ্ট কার্যকরী কাঠামোর মধ্যে বিনাস্ত করতে চেষ্টা করেন। ওয়ার্কিং কমিটিগুলিতে তার ভূমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ১৯১৯-২০ খ্রিঃ উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করার কাজের মধ্য দিয়েই জওহরলাল গণ সংগঠনে কাজ করবার প্রথম অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পাশাপাশি গান্ধীজি প্রবর্তিত অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি একাত্মভাবে আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পান।
এর ফলে তাকে ১৯২১-২২ খ্রিঃ কারাদণ্ড ও জরিমানার দন্ড ভোগ করতে হয়। পরবর্তীকালে নয় বছরের কারাদন্ড নয়বারে ভোগ করেন। ১৯৩৪ খ্রিঃ জুন থেকে ১৯৩৫ খ্রিঃ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারাবাসকালে জওহরলাল তার বহুখ্যাত আত্মজীবনী An Autobiography রচনা সম্পূর্ণ করেন। এই গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ খ্রিঃ। ১৯২৩ খ্রিঃ এলাহাবাদের পৌরসভার যে নির্বাচন হয় তাতে তিনি সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের বাইরে এটিই ছিল তাঁর প্রথম নির্বাচিত পদ। এই পদ থেকেই তার কর্মোৎসাহ চূড়ান্তবেগ লাভ করে।
তিনি প্রথম থেকেই নিয়মশৃঙ্খলা গড়ে তুলে পৌরসভার শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি বিভাগে অসাধারণ কর্মস্রোত সৃষ্টি করেন। ১৯২৪ খ্রিঃ তিনি পৌরসভাব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। প্রথম নির্বাচনে ২০-২১ ভোটে জয়লাভ করলেও ১৯২৮ খ্রিঃ পুনর্বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একভোটে পরাস্ত হন। ক্রমাগত কারাবাস জওহরলালের জীবনের অবশ্য প্রাপ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। এই জীবন ধারার মধ্যেই ১৯৩১ খ্রিঃ পিতা মতিলালের মৃত্যু হয়। পাঁচ পছর পরেই ১৯৩৬ খ্রিঃ ঘটে স্ত্রী কমলার অকাল মৃত্যু।
পিতার সঙ্গে শেষ দেখা না হলেও প্যারোলে ছাড়া পেয়ে জওহরলাল স্ত্রীর কাছে আসতে পেরেছিলেন। ১৯৩৮ খ্রিঃ মারা গেলেন মাতা স্বরূপরানী। এইভাবে ব্যক্তিগত জীবনে যতই শূন্যস্থান বাড়তে লাগল, ততই সেই শূন্যস্থান পুরণ করতে লাগলেন দেশের সেবার কাজে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে। তিনজনের অভাব বহুজনের সান্নিধ্যে পুরণ হতে থাকল। ১৯৩৬ খ্রিঃ কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে জওহরলাল সভাপতি নির্বাচিত হন। তার দেশপ্রেম স্বদেশের গন্ডিকে অতিক্রম করে বিশ্বে পরিব্যাপ্ত হয়। স্পেনের প্রজাতন্ত্রের সমর্থনে তিনি নানাবিধ উদ্যোগ নেন এবং ১৯৩৮ খ্রিঃ স্বয়ং স্পেনে যান।
কর্ম জীবনঃ এই সময়ে ইংলন্ডও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাবধারা তাঁকে প্রভাবিত করে। ১৯৩৯ খ্রিঃ তিনি কংগ্রেস গৃহীত National Planning Committee- এর চেয়ারম্যান হন। এতেই গান্ধীজির সঙ্গে তার চূড়ান্ত মতপার্থক্য দেখা দেয় ৷ তিনি USSR- এর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ঢঙে এদেশেও উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করতে চাইলে গান্ধীজি তার বিরোধিতা করেন। এই সময়েই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ৷ জওহরলাল চিন থেকে ফিরে এসে দেখেন যুদ্ধের ব্যাপারে গান্ধীজি ইংরাজদের পক্ষে। কিন্তু জওহরলাল ছিলেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।
তিনি দেখলেন, ইংরাজদের সমর্থন করার সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার কিছুমাত্র সম্পর্ক নেই। তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে সুভাষচন্দ্র এবং গান্ধীজির প্রস্তাব ও পরামর্শ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলেন। যদিও ১৯৪২ খ্রিঃ ভারত ছাড় আন্দোলনের সময় গান্ধী ও জওহরলাল পুনরায় ঐকমতো ফিরে আসেন ও উভয়ে গ্রেপ্তার বরণ করেন। কারাবাস থেকে মুক্তিলাভ করলেন ১৯৪৫ খ্রিঃ। এই সময় ক্যাবিনেট মিশনে মুসলিম লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং ভাইসরয়ের আহ্বানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দেন ২ রা সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ খ্রিঃ।
এর পরেই আসে স্বাধীনতার প্রত্যাশিত দিনটি এবং পূর্ব দিনেই দেশ ভাগ হয়ে জন্ম হয় পাকিস্তানের। চোদ্দজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এবং জওহরলাল স্বাধীন ভারতবর্ষের সেই মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমরণকাল ওই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। স্বাধীন ভারতের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ছিল অত্যস্ত সংকটময়। তেমনি বৈদেশিক নীতিও ছিল দুর্বল। অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সীমান্তে নিত্য সংঘর্ষ দেশকে দীর্ণ করে তুলেছিল।
এমনি একটি বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে জওহরলাল দেশের হাল ধরলেন। পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে এবং একটি নির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতি উদ্ভাবন করে তাঁকে চলার পথ তৈরি করতে হয়। ১৯৫১-৫২ খ্রিঃ ভারতীয় সাংবিধানিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নতুন সরকারেরও প্রধান হন জওহরলাল। এই সময়ে প্রেসিডেন্ট নাসের ও মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে যে জোটনিরপেক্ষ গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল জওহরলাল তার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হলেন।
রচনাবলীঃ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনের নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও জওহরলালের সাহিত্যপ্রাণ হৃদয়টি নানা রচনায় নিয়োজিত হয়েছিল।
- Soviet Russia
- Letters from a Father to his Daughter
- Glimpses of World History
- China, Spain and the War
- The Discovery of India
প্রভৃতি গ্রন্থে জওহরলালের সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে তাঁর আত্মজীবনী ও Discovery of India গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ হয়। তাঁর ভাষণাবলীর সংকলন Speeches চারখন্ডে প্রকাশিত হয় (১৯৪৬-৬৪)।
মৃত্যুঃ ১৯৬৪ খ্রিঃ ২৭ শে মে জওহরলাল পরলোক গমন করেন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ